টিসিবি’র ট্রাকে পচা পিয়াজ নিয়ে ক্ষোভ

গার্মেন্ট কর্মী রিনা। রাজধানী মহাখালীর ওয়ারলেস গেটের টি এন্ড টি মহিলা কলেজ সংলগ্ন মাঠে টিসিবির পণ্য নিতে এসেছিলেন। রোববার দুপুর ১২ টা থেকেই ট্রাকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। বেলা দুইটার দিকে ট্রাকের দেখা পান রিনা। আরও দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিসিবির পণ্য কিনেন। এরপর হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছিলেন পণ্যগুলো। পলিথিন থেকে পিয়াজ বের করে নিচে ঢেলে দেখলেন তার প্রায় সবগুলোই পচে নষ্ট হয়ে গেছে। রিনা বলেন, ২০ টাকা কইরা পাঁচ কেজি পিয়াজ দিছে।
 
সবগুলাই পইচ্যা গেছে। এগুলা দিয়া কি করমু। বাসায় গিয়া ফালাই দিতে হইব। ১০০ টাকা নষ্ট হইয়া গেল।
 
রিনার স্বামী জুয়েলও একজন গার্মেন্ট কর্মী। ওয়ারলেসের দক্ষিণ পাড়া এক সাবলেট বাসায় থাকেন তারা। জুয়েল মাসে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন। এরমধ্যে সাত হাজার টাকা শুধু বাড়ি ভাড়াতেই চলে যায়। বাকি টাকা দিয়ে তিন সন্তানের লেখাপড়াসহ তার সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। রিনাও প্রায় ১৬ বছর গার্মেন্টেসে কাজ করেছেন। কিন্তু তার ১৫ মাসের ছোট সন্তানের জন্য এখন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে সংসারে এখন টানাপড়েন বেড়েছে। রিনা জানান, স্বামীর বেতনে সংসার চলে না। তাই এক দেবরও তাদের সঙ্গে থেকে আর্থিক সহায়তা করেন। এতে কোন রকমে কষ্ট করে সংসার চলছে। তাই কিছু টাকা বাঁচাতে টিসিবি থেকে স্বল্পমূল্যে পণ্য নিতে এসেছিলেন। কিন্তু পঁচা পিয়াজ কিনে রিনা হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
 
মহাখালী কড়াইলের সরকারি জায়গায় ঘর বানিয়ে বসবাস করেন সোফিয়ার পরিবার। বর্তমান বাজারে পণ্যমূল্যের বৃদ্ধিতে টালমাটাল পরিস্থিতি তাদের। তাই অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছোট মেয়ে তামান্নাকে নিয়ে টিসিবির পণ্য নিয়েছেন। পঁচা পিয়াজ দেয়ার কারণে তিনিও উষ্মা প্রকাশ করেন। সোফিয়া বলেন, আমরা গরিব দেইখা আমাগো পঁচা পিয়াজ দিতাছে। আমরা তো ফ্রি নেই নাই। টাকা দিয়া নিছি। তাহলে পঁচা পিয়াজ দেয় কেন। ট্রাকের লোকরে জিগাইলে কয় এই মাল আমাগো না সরকারে দিছে। নিলে নেন না নিলে চলে যান। আমরা কি করমু। না নিয়াও তো পারি না।
সোফিয়া জানান, সরকারি জায়গায় ঘর বানানোর জন্য অনেক টাকা ঋণ নিয়েছেন। এখন সেই টাকা পরিশোধ করতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। এরমধ্যে বাজার খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে টিসিবি থেকে পণ্য নিতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমাগো উপায় নাই। জিনিসপত্রের অনেক বাড়ছে। এত টাকা দিয়া কি বাজার করা যায়। রোজায় তেল, চিনি লাগব। এজন্য আজ নিতে আইছি। কিন্তু পঁচা পিয়াজও নিয়া যাইতে হইতাছে।
আকলিমা নামের এক ক্রেতা বলেন, আমরা অনেক আশা নিয়া টিসিবির লাইনে দাঁড়াই। কিন্তু আমাগো যদি পঁচা জিনিসপত্র দেয় তাইলে লাভ হইলো কই। কম টাকা দিয়া পিয়াজ নিয়া যদি পাঁচ কেজির মধ্যে তিন কেজি ফালাই দিতে হয় তাইলে দাম তো কম পড়ে না। তাই ট্রাকে দিয়া আমাগো লাভ কি।
 
বাজারে পিয়াজের দাম নেমে যাওয়ায় টিসিবি রোববার থেকে ২০ টাকা কেজি দরে পিয়াজ বিক্রি শুরু করে। এর আগে ৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছিল। বর্তমানে ঢাকায় তেল, চিনি, মশুর ডাল, পিয়াজ, ছোলা ও খেঁজুরবিক্রি করছে টিসিবি। আর ঢাকার বাইরে কার্ডের মাধ্যমে খেজুর ছাড়া বাকি সব পণ্যই পাওয়া যাচ্ছে টিসিবি দোকান বা ট্রাকে। টিসিবির প্রতি লিটার তেল ১১০ টাকা, চিনি ৫৫ টাকা, ডাল ৬৫ টাকা, ছোলা ৫০ এবং খেজুর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।