রাশিয়ান ক্রেতাদের অর্ডার না নেয়ার পরামর্শ বিজিএমইএ’র

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর থেকে শিপিং লাইনগুলো তাদের মস্কোমুখী সকল কন্টেইনার পরিবহনের বুকিং বাতিল করছে। ফলে পশ্চিমা দেশগুলোর আর্থিক নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার বাজারের কার্যাদেশ নিয়ে এখন রীতিমতো উদ্বিগ্ন দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা। তারা নিজ সদস্যদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এবং নতুন কোনো কার্যাদেশ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ। পাশাপাশি বিকেএমইএও তাদের সদস্যদের রাশিয়ান ক্রেতাদের থেকে সরাসরি অর্ডার না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

পোশাক খাতের কয়েকজন উদ্যোক্তা বললেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও যুক্তরাজ্য। তবে রাশিয়ার বাজার মাঝারি আকারের। কারণ ইউক্রেনের পাশেই জার্মানি ও পোল্যান্ডের মতো বড় বাজার রয়েছে।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম আমরা। প্রতি মাসেই ভালো প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপের দেশগুলোর পাশাপাশি রাশিয়ার বাজারেও আমাদের রপ্তানি বাড়ছিল।

কিন্তু যুদ্ধ সবকিছু ওলটপালট করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, রাশিয়া ইউরোপের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় এই যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপের বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে চলমান ইউক্রেনের উপর হামলায় কৃষ্ণ সাগরের পানিপথে রাশিয়ান জাহাজ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ) তাদের আকাশসীমা দেশটির জন্য বন্ধ করেছে। ফলে উৎপাদন শেষ হওয়ার পরও পোশাকপণ্যের চালান রাশিয়ায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। রাশিয়ান ক্রেতাদের আশ্বাস সত্ত্বেও চালানের মূল্য পাওয়ার (পেমেন্ট) বিষয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তৈরি পোশাক উদ্যোক্তারা।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পেমেন্ট ব্যবস্থা সুইফট থেকে রাশিয়ার সব ব্যাংকের বাদ পড়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য পণ্যের মূল্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সমিতি (বিজিএমইএ) রপ্তানিকারক কারখানা মালিকদের রাশিয়ান বাজার থেকে কোনো কার্যাদেশ না নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় শতাধিক পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রাশিয়াতে সরাসরি বা তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে পোশাকপণ্য সরবরাহ করছে। যেমন- রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক রেনেসাঁস গ্রুপ। তাদের হাতে রাশিয়ার বাজারের ১৫ মিলিয়ন ডলারের কার্যাদেশ রয়েছে। এরমধ্যে কিছু পণ্য উৎপাদন পর্যায়ে রয়েছে, আরও বেশকিছু রয়েছে মজুত।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক সাইফুল আলম বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই আমরা রাশিয়ার সঙ্গে ব্যবসা করছি। দেশটিতে আমাদের বার্ষিক রপ্তানি প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার। তিনি জানান, কিছু পোশাক পণ্যের উৎপাদন প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। তাদের কাছে পণ্য (প্রস্তুত উপকরণের) বড় মজুতও আছে, যা তারা আপাতত অব্যবহৃত রাখবেন। সাইফুল আলম বলেন, আন্তর্জাতিক দু’টি কুরিয়ার সার্ভিস প্রোভাইডার- ডিএইচএল আর ফেডএক্স ইতিমধ্যেই আমাদের জানিয়েছে তারা রাশিয়াগামী কোনো পার্সেল গ্রহণ করবে না। জাহাজে পণ্য পরিবাহী একটি সংস্থা- ওরিয়েন্ট ওভারসিজ শিপিং লাইনও এ গন্তব্যের জন্য কোনো পণ্য চালান বহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, এর মধ্যেই রাশিয়ান ক্রেতাদের কাছে যেসব পণ্যের চালান পাঠানো হয়েছে তার পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ রাশিয়ান ব্যাংকগুলো সুইফট থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চলেছে। অথচ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সব রকমের মূল্য গ্রহণ/পরিশোধের (পেমেন্টে) লেনদেনে সুইফটের অনুমোদন দরকার হয়। একইসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা রাশিয়ান কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ কারণে নিজ সদস্যদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার এবং নতুন কোনো কার্যাদেশ না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিজিএমইএ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও একই কথা জানান। বলেন, আমরাও সদস্যদের রাশিয়ান ক্রেতাদের থেকে সরাসরি অর্ডার না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

বিজিএমইএ ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদুল্লাহ আজিম আরও বলেন, আমাদের পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য রাশিয়া একটি উদীয়মান বাজার। এ বাজারে সম্প্রসারণের লক্ষ্য চলতি বছর আমরা একটি রোড শো আয়োজনের পরিকল্পনা করেছিলাম, সেটাও এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়লো।

উদ্বেগের কথা জানিয়ে গত বুধবার এক বিবৃতি দিয়েছে বিজিএমইএ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পোশাক শিল্পে উদ্বেগের সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির জন্য একটি সম্ভাবনাময় এবং উদীয়মান বাজার রাশিয়ার উপর বেশ কয়েকটি দেশ ব্যাপক পরিধিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বিশেষ করে সুইফট আন্তর্জাতিক পেমেন্ট সিস্টেমে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়ায় আমাদের বাণিজ্যে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।