মহামারী দর্শকের ঢলে বাধ দিয়ে রেখেছে

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মাঠে চার আর ছক্কার ফুলঝুড়ি। আর আর সে চার আর ছক্কার তালে গ্যারারিতে দর্শকদের উম্মাদনা। বতর্মান সময়ে ক্রিকেটের সবচাইতে জনপ্রিয় ফরম্যাটের নাম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। মাঠে ব্যাটসম্যানদের দুরন্ত ব্যাটিং কিংবা বোলারদের এক একটি উইকেট যেন দর্শকদের আনন্দের সবচাইতে বড় খোরাক। মাঠে উঠবে চার আর ছক্কার ঝড়। আর গ্যালারিতে বাদ্য বাজিয়ে ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে আনন্দ উল্লাসে মাতবে দর্শকরা সেটাই ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের নিয়মিত চিত্র।

কারন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হচ্চে বিনোদনের পরিপূর্ণ এক প্যাকেজ। যেখানে ক্রিকেট ছাড়াও রয়েছে এ প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ডিজের মত আয়োজন। কিন্তু করোনা নামক মহামারী সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সেখানেই দর্শকের ঢল।

কিন্তু করোনা নামক মহামারী দর্শকের সে ঢলে বাধ দিয়ে রেখেছে। একটা সময় বলা হতো টেস্ট ক্রিকেট হচ্ছে ঘুম পাড়ানি মাসি পিসির গান। কিন্তু করোনার কারণে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটও যেন সে মাসি পিসির গানে পরিণত হয়েছে। এখন মাঠে ঝড় উঠছে বটে তবে গ্যালারিতে বিরাজ করতে শূন্যতা। বিরাজ করছে এক রকমের হাহাকার।

দুই বছর আগেও যখন দেশের ক্রিকেটের সবচাইতে জমজমাট আসর বিপিএল আয়োজিত হতো তখন দর্শকের ঢল নামতো মাঠে। একটা টিকিটের জন্য সেকি প্রতিযোগিতা। সে কি হাহাকার। কত আবদার, কত ফোন। কিন্তু এখন চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। টিকিটের জন্য নেই হাকডাক। নেই কালো বাজারীদের আনাগোনা। টিকিট কাউন্টারের সামনে নেই দীর্ঘ লাইন। করোনা কেড়ে নিয়েছে সব আনন্দ আর বিনোদন।

চট্টগ্রামে বিপিএলের খেলা মানে আনন্দ, উচ্ছাস আর উত্তেজনায় ঠাসা। যেহেতু বিপিএলে চট্টগ্রামের দল থাকে তাই চট্টগ্রামের মানুষের আকর্ষণটা একটু বাড়তিই থাকে। তাছাড়াও চট্টগ্রামের দর্শকরা একটু বেশি ক্রিকেট প্রেমী। ঢাকায় যেখানে দর্শক খরায় ভুগে বিপিএল সেখানে চট্টগ্রাম ভরিয়ে রাখে গ্যালারি। শুধু তাই নয় ঢাকায় যেখানে রান কিংবা উইকেটের জন্য মাথা কুড়ে মরতে হয় ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারদের সেখানে চট্টগ্রামে উঠে চার আর ছক্কার পাশাপাশি উইকেটেরও ঝড়। তাই চট্টগ্রাম বরাবরই বিপিএলের জন্য আদর্শ জায়গা। কিন্তু এবারের বিপিএল যেন একেবারে অচেনা এক বিপিএল।

গতকাল শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামে শুরু হয়েছে বিপিএলের এবারের আসর। ঢাকায় প্রথম পর্ব শেষে বিপিএলের দ্বিতীয় পর্ব চলছে এখন চট্টগ্রামে। আর চট্টগ্রাম পর্বের প্রথম দিনেই ঘটে গেছে একাধিক ঘটনা। প্রথম দিনেই সেঞ্চুরি হয়েছে দুটি। যা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সচরাচর বিরল। তার উপর প্রথম দিনে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন চট্টগ্রামের ছেলে তামিম ইকবাল।

অথচ তার ঝড়ো ব্যাটিংটা দেখতে পেলনা চট্টগ্রামের দর্শকরা। কারন করোনার কারনে মাঠে দর্শক প্রবেশ নিষিদ্ধ। অথচ এই বিপিএলকে কেন্দ্র করে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম সেজেছে নতুন রূপে। গ্যালারির ভাঙা চেয়ার সরিয়ে বসানো হয়েছে নতুন চেয়ার। লাল, সবুজ আর নীলের সমাহারে নতুন লুকে জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকে দেখাচ্ছে দারুন সুন্দর। অথচ সে গ্যালারিতে নেই গ্যালারির প্রাণ দর্শক। ফলে একেবারে নিস্প্রান বিপিএল এখন চলছে চট্টগ্রামে। এ যেন অন্য এক বিপিএল। যে বিপিএল আগে কখনোই দেখেনি ক্রিকেট প্রেমীরা।

দেশে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে করোনা। ফলে সীমিত করা হয়েছে অনেক কিছু। নিষিদ্ধ করা হয়েছে খোলা মাঠে জমায়েত। কিন্তু থেমে নেই কোন কিছু। খোলা মাঠে মেলা চলছে এখনো চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বিয়ে বাড়িতে মানা হচ্ছেনা নির্দিষ্ট পরিমান অতিথির বিধান। মানা হচ্ছেনা কোন বিধি নিষেধ। হাটে, মাঠে, ঘাটে, বাজারে সর্বত্র মানুষের ভীড়। ক্রিকেট প্রেমীদের হতাশাটা এখানেই। তাদের দাবি অন্তত সীমিত করে হলেও বিপিএলে গ্যালারীতে দর্শক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হোক। প্রয়োজনে করোনা নেগেটিভ সনদ এবং ঠিকার সনদ দেখে মাঠে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হোক। হতে পারে সেটা ধারন ক্ষমতার অর্ধেক কিংবা তারও কম। তবুও অন্তত ক্রিকেট প্রেমীরা মাঠে বসে বিপিএলের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। অন্তত এমন হতশ্রী এবং নিস্প্রান বিপিএল দেখতে হবেনা ক্রিকেট প্রেমীদের।