ইন্সিনেটর প্লান্ট স্থাপনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ইন্সিনেটর প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। তিনি বলেন, সংক্রমাক মেডিকেল বর্জ্য নিষ্কাশনে গুরুত্ব দিয়ে ইন্সিনেটর প্লান্ট বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে দৈনিক ৫টন মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংস করা যাবে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। এধরণের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন করে গবেষণার প্রয়োজন নেই। উন্নত শহরগুলোকে অনুসরণ করলেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি সরকারি বেসরকারি মেডিকেল, ডায়গনষ্টিক সেন্টার গুলোকে তাদের ব্যবহার্য মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গাইড লাইন অনুসরণ করে অটোক্লেভ মেশিনের মাধ্যমে জীবাণুমুক্ত করে তা বায়োসেফটিক্যাল ব্যাগে ভরে বর্জ্য সংগ্রহকারীদেরকে দেয়ার জন্য আহ্বান জানান। আজ মঙ্গলবার সকালে আনন্দবাজার টিজিতে জাইকার অর্থায়নে ও চসিকের উদ্যোগে স্থাপিত ইন্সিনেটর প্লান্টের উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলমের সভাপতিত্বে ও প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী, যুগ্ম সচিব সবুর হোসেন, জাইকার চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হাইয়াকাওয়া ইয়োহো, সিনিয়র রিপ্রেজেন্টেটিভ সাইকি তাকাশি, প্যানেল মেয়র মো. গিয়াস উদ্দিন, আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মো. আব্দুল মান্নান, অধ্যাপক মো. ইসমাইল, মো. ইলিয়াস, সচিব খালেদ মাহমুদ, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম প্রমুখ।
মেয়র আরো বলেন, করোনার এই সময়ে যেভাবে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাবস যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে তাতে এই ভাইরাসের সংক্রমণ মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এছাড়াও শিল্প বর্জ্যরে কিছু অংশ ভাগাড়ে এবং কিছু নালা-নর্দমার মাধ্যমে নদী-সমুদ্রে গিয়ে পড়ে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি মেডিকেল বর্জ্যরে পাশাপাশি শিল্পবর্জ্য ও ইলেকট্রনিকবর্জ্য সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা এবং এধরণের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা ও এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়ে নগরীর সেবা সংস্থাগুলোকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্লান্টটিতে মেডিকেল বর্জ্য পোড়ানো হবে পরিবেশ সম্মত উপায়ে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষণ রোধ হবে অন্যদিকে সংগৃহিত মেডিকেল বর্জ্যরে কারণে সংক্রামক রোগ ছড়ায় তাও অনেকাংশে হ্রাস পাবে। নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনায়নে চসিক অনুমোদিত মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহকারী ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’কে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তথ্য সংগ্রহ, পরিবহন এবং বিশোধনের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চসিককে বর্জ্য বিশোধনের চার্জ দিয়ে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে এই প্লান্টটি ব্যবহার করবে। জাইকার ৩কোটি টাকা ও চসিকের ৬৬লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই প্লান্টটি স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ জাইকার প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগি দেশ। তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখলে অচিরেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। চসিকের সাথে জাইকার যে উন্নয়ন কাজগুলো চলছে তা অব্যাহত রাখবেন বলে মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, চট্টগ্রাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি নগরী। এই নগরীর ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। এই নগরীর উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক হাব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে জাপানের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম জাপান সফর করে জাপানের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন। এই সম্পর্ক আজ অবধি অব্যাহত আছে। জাপান চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক সহযোগিতা প্রদান করেছে সেই সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত রাখা হবে। তিনি ইন্সিনেটর স্থাপনে জাইকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনায়নে এই প্লান্টটি যথেষ্ট অবদান রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভিশন ২০৪১’সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তা বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ অচিরেই উন্নত দেশ হিসেবে বিশ্বমাঝে আবির্ভূত হবে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ড. মলয় চৌধুরী বলেন, নগরীর মেডিকেল বর্জ্য বিশোধনে চসিকই দেশে প্রথম ইন্সিনেটর প্লান্ট স্থাপন করল যা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিনন্দনযোগ্য একটি প্রয়াস। আগামীতে চট্টগ্রাম একটি পরিবেশবান্ধব নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
জাইকার চীফ রিপ্রেজেন্টেটিভ হাইয়াকাওয়া ইয়োহো বলেন, জাইকার মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য স্থাপিত ইন্সিনেটর প্লান্ট পরিবেশ সম্মত উপায়ে ধোঁয়াবিহীন চুল্লীর মাধ্যমে বর্জ্য বিশোধন করবে। উচ্চ তাপমাত্রায় এই বর্জ্য বিশোধন করা হবে। এই প্লান্টটি পরিচালনা করতে জাইকার বিশেষজ্ঞ টিম কাজ করবে এবং চসিক সেবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উন্নত বিশ্বের শহরগুলোর ন্যায় এই ইন্সিনেটর প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে চসিক নগরীকে একটি পরিবেশবান্ধব নগর গড়তে নতুনমাত্রা যোগ করল। তিনি জাপান সরকার ও জাইকাকে চসিকের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।