কুয়াশার চাদরে ঢাকা গ্রাম জনপদ

রিপোর্ট: মির্জা মিজান
জনজীবনে শীতের অনুভূতি অনেক স্থানেই আগের চেয়ে বেশি। যাকে বলা যায় কনকনে শীত। শুধু তাই নয়, বেড়েছে কুয়াশার প্রকোপ। প্রায় সারা দেশই যেন কম-বেশি কুয়াশার চাদরে ঢাকা, যানবাহন চলাচলে ঘটছে ব্যঘাত। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশা থাকায় জেলার বিভিন্ন সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে।

হিম বাতাসে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রাত যত গভীর হয় ততই বৃষ্টির ফোঁটার মতো গুঁড়ি গুঁড়ি কুয়াশা ঝরে। তীব্র ঠান্ডার কারণে অনেক নিম্ন আয়ের লোকজন সকালে বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় কাজে যোগ দিতে পারছেন না। ফলে তারা পড়েন চরম বিপাকে।

মাঘের শীতে বাঘ পালায়_ এই প্রবাদকে সত্য প্রমাণ করতেই যেন দেশজুড়ে জাঁকিয়ে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হঠাৎ করেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দিনেও বেশিরভাগ সময় কুয়াশার আবরণ সূর্যকে আড়াল করে রাখছে। সারাদিন আবছায়া আর কনকনে হাওয়ার ঝাপটা। ঘন কুয়াশা আর ঠাণ্ডা বাতাসে জনজীবনে নেমে এসেছে শৈত্যপ্রবাহের মতো অনুভূতি। ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক, নদী ও আকাশপথে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। শীতের কাঁপুনিতে দরিদ্র মানুষের ভোগান্তির সীমা নেই। বস্তিতে থাকা মানুষের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শীতজনিত কারণে শিশুদের রোগ বাড়ছে। শীত ও কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আলুসহ রবিশস্য। বিপর্যস্ত হচ্ছে পোলট্রি শিল্প। সবমিলিয়ে শীতে একটা জবুথবু অবস্থা। এ কারণে রোগবালাই বেড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত আছে।

হঠাৎ শীত ও কুয়াশা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াকে দায়ী করেছেন।

এদিকে শীত ও কুয়াশার কারণে বোরোর বীজতলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা সময়মতো বোরো আবাদ করতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়াবিদরা জানান, ঘন কুয়াশায় জলীয় বাষ্প উপরে উঠতে পারছে না। মাঝে মধ্যে সূর্যের মুখ দেখা গেলেও উত্তাপ থাকে না। দিনের অধিকাংশ সময় কুয়াশার চাদরে মোড়ানো থাকে আকাশ।
টানা শৈত্যপ্রবাহের ফলে আলু ও বোরো ধানের বীজ ‘কা পচা’ বা ‘ব্লাইট’ রোগের হুমকিতে পড়েছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও আবহাওয়া অধিদফতরের কৃষি পূর্বাভাস শাখা আলুর চারাকে ব্লাইট রোগের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে জমিতে ছত্রাকনাশক দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। আর বোরোর বীজতলা বাঁচাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টার দিকে ঘন কুয়াশার কারণে কর্ণফুলী নদীতে বন্দর চ্যানেলের পাথরের বাঁধে আটকা পড়েছে ‘ওটি ফজিলত’। ট্যাংকারটিতে যমুনা অয়েল কোম্পানির ডিপো থেকে তেল লোড করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, তেল লোড করে ডলফিন জেটি এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় ট্যাংকার বন্দর চ্যানেলের বাম পাশে পাথরের বাঁধে আটকা পড়ে। এ সময় ট্যাংকার একপাশে কাত হয়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টা পর্যন্ত ঢাকা থেকে কোনও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট আসেনি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তবে ভিজিবিলিটি ভালো হওয়ার পর প্রথমে মাস্কাট ও দুবাই থেকে আসা আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করেছে।

শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক উইং কমান্ডার ফরহাদ হোসেন খান জানান, ভিজিবিলিটি ভালো হওয়ার পর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো সোয়া ৯টার দিকে অবতরণ করেছে। তবে ঢাকার ভিজিবিলিটি খারাপ থাকায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ডিলে হচ্ছে।

অনুলিখন:মির্জা ইমতিয়াজ