গণবিক্ষোভের মুখে সুদানের প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, ক্ষমতায় কার্যত সেনাবাহিনী

রাজধানী খার্তুমে গণবিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন সুদানের প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লা হামদক। সেনাবাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে তিনি সম্প্রতি যে চুক্তিতে পৌঁছেছেন, তার বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন রোববার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। উল্লেখ্য, অক্টোবরে সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাকে বন্দি করে। এরপর নানা দেনদরবারের পর আবার তাকে প্রধানমন্ত্রী পদে পুনর্বহাল করে। কিন্তু সেনাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলতেই থাকে। পূর্ণাঙ্গ বেসামরিক শাসনের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়ার স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী আবারো ভয়ানক দমনপীড়ন চালায়।

এতে কমপক্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন। এ অবস্থায় পদত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লাহ হামদক। এর ফলে সরকারের পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ আবার চলে গেল উর্দিধারীদের হাতে।

২০১৯ সালে সুদানের দীর্ঘদিনের স্বৈরাচার প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশির ব্যাপক এক জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা হারান। এরপর সেখানে গণতান্ত্রিক শাসনে ফেরার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আব্দাল্লা হামদক পদত্যাগ করার ফলে সেই প্রচেষ্টায় আরেকটি বড় আঘাত লাগলো। পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে টেলিভিশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, দেশ একটি বিপজ্জনক পয়েন্টে দাঁড়িয়ে এখন। এই অবস্থা পুরোপুরি টিকে থাকার জন্য দেশের জন্য হুমকি। তিনি আরো জানান, দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে তিনি সর্বোত্তম চেষ্টা করেছেন। সবাইকে একমত করতে তিনি সব চেষ্টা করা সত্ত্বেও তা সম্ভব হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ২৫ শে অক্টোবর দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটনায় সেনাবাহিনী। এরপর বেসামরিক ও সামরিক বাহিনীর মধ্যে অস্বস্তিকর এক ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তি হয়। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী হামদককে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। তার পর তার সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে নভেম্বরে হামদককে পুনর্বহাল করা হয় প্রধানমন্ত্রী পদে। টেকনোক্র্যাটদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রীপরিষদকে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু বেসামরিক প্রধানমন্ত্রীর হাতে কতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। পক্ষান্তরে বিক্ষোভকারীরা বলতে থাকেন, তারা সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করেন না। তাই রোববার হাজার হাজার মানুষ রাজধানী খার্তুম এবং ওমদুরমান শহরে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা সেনাবাহিনীকে রাজনীতি ত্যাগ করার স্লোগান দিতে থাকেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অধিকারকর্মীরা বলছেন, ২০২২ সাল হবে সাংবিধানিক প্রতিরোধের বছর। অক্টোবরের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে রোববার মারা গেছেন কমপক্ষে দু’জন। এসব তথ্য দিয়েছে গণতন্ত্রপন্থি সুদান সেন্ট্রাল ডক্টরস কমিটি।

অক্টোবরের অভ্যুত্থানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অভ্যুত্থানের নেতা সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল বুরহান বলেছেন, একটি গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষা করতে সেনাবাহিনী পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশ গৃহযুদ্ধের মুখে ছিল। তিনি আশার বাণী শুনিয়েছিলেন যে, সুদানে বেসামরিক শাসন ফিরবে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে হবে সাধারণ নির্বাচন।

১লা জানুয়ারি ছিল সুদানের স্বাধীনতা দিবস। কিন্তু এবার কোনো জাকজমক ছাড়াই উদযাপন হয়েছে এ দিবসটি। এর ওপর প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ সামরিক নেতাদের ওপর একটি বড় আঘাত হিসেবে এসেছে। কারণ তারা মনে করেছিল প্রধানমন্ত্রী হামদকের সঙ্গে একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে তারা প্রতিবাদ বিক্ষোভকারীদের শান্ত করতে পারবে এবং ক্ষমতায় থাকাকে বৈধতা দিতে পারবে। কিন্তু তাদের সেই হিসাব ভুল হয়েছে। এখন প্রকাশ পেয়েছে যে, এখন দেশটির ক্ষমতায় আসলেই সেনাবাহিনী। অর্থাৎ দেশটির বেসামরিক শাসনে ফেরার পথ উল্টে গেল।