সুনামির মতো বিপজ্জনক রূপ নিয়েছে করোনা সংক্রমণ- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

জলোচ্ছ্বাসের মতো, সুনামির মতো বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে করোনা সংক্রমণ। ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের সম্মিলিত আক্রমণে বিশ্বজুড়ে আবার ভয়াবহ এক রূপ নিয়েছে করোনা মহামারি। এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস সতর্ক করেছেন বিশ্ববাসীকে। তিনি বলেছেন, এই দুটি ভ্যারিয়েন্টের আক্রমণে এক বিপজ্জনক সুনামির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যখন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে তখন এই সতর্কতা দিলেন তিনি। দ্বিতীয় দিনের মতো ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে এ যাবতকালের মধ্যে একদিনে কমপক্ষে দুই লাখ আট হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। গত এক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে দিনে গড়ে রেকর্ড দুই লাখ ৬৫ হাজার ৪২৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া সংক্রমণ রেকর্ড ভঙ্গ করেছে ডেনমার্ক, পর্তুগাল, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়ায়।

বুধবার পোল্যান্ডে করোনায় মারা গেছেন কমপক্ষে ৭৯৪ জন।

করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের এই সময়ে এটাই একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। এসব মানুষের চার ভাগের মধ্যে তিন ভাগের বেশি করোনাভাইরাসের টিকা নেননি। এখন পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বহু দেশে ছড়িয়ে পড়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। ডেল্টার চেয়ে তার সংক্রমণ সক্ষমতা অনেক বেশি। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে তা কম ভয়াবহতা সৃষ্টি করে। ধারণা করা হচ্ছে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে এই ভ্যারিয়েন্টের ভূমিকা বেশি। এমন অবস্থায় ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরান সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি আর ওমিক্রন সংক্রমণকে করোনার ঢেউ বলে মনে করবেন না। তিনি একে অভিহিত করেন ‘জোয়ারের ঢেউ’ হিসেবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডেল্টা এবং ওমিক্রনকে ‘যমজ হুমকি’ হিসেবে সতর্ক করেছেন। বলেছেন, মোট যে পরিমাণ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছেন, তার প্রায় সবই এই দুটি ভ্যারিয়েন্টের জন্য। এর ফলে স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর অব্যাহতভাবে তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে। এতে স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, বর্তমানে প্রতিদিন বিশ্বে নতুন করে প্রায় ৯ লাখ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিভিন্ন মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, ফ্রান্সে প্রতি সেকেন্ডে দু’জন করে মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানুয়ারির মাঝামাঝি সংক্রমণ পিক-এ বা সর্বোচ্ছে পৌঁছাতে পারে। ওদিকে করোনা সংক্রমণের বিরুদ্ধে সম্পদশালী অনেক দেশ টিকার তৃতীয় ডোজ বা বুস্টার ডোজ প্রয়োগ শুরু করেছে। এর মধ্যে বৃটেনে শতকরা ৫৭ ভাগ মানুষের বয়স ১২ বছরের বেশি। তাদেরকে দেয়া হয়েছে বুস্টার ডোজ। এ অবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরোস বলেছেন, ধনী দেশগুলোর ব্যাপক আকারে বুস্টার ডোজ দেয়ার অভিযানের জন্য করোনা মহামারি প্রলম্বিত হবে। কারণ, এর ফলে দরিদ্র দেশগুলোতে টিকা সরবরাহ দেয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এর ফলে ভাইরাসকে আরো বিস্তার লাভ করার এবং রূপান্তরিত হওয়ার ব্যাপক সুযোগ দেয়া হচ্ছে।

নতুন বছরে অর্থাৎ ২০২২ সালের মাঝামাঝি যাতে বিশ্বের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষকে টিকা দেয়া যায় সেই প্রত্যয় নেয়ার আহ্বান জানান বিশ্বনেতাদের কাছে। এরই মধ্যে বিশ্বের একশটি দেশ তাদের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৪০ ভাগকে টিকা দিতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মঙ্গলবার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে, ২৬ শে ডিসেম্বর সমাপ্ত সপ্তাহের আগে পর্যন্ত ইউরোপে সব করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৫৭ ভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে তা শতকরা ৩০ ভাগ।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বর্তমান চিত্র একনজরে
ফ্রান্সে নতুন করে একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন দুই লাখ ৮ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ৫৩ জনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে। মারা গেছেন ১৮৪ জন।
বৃটেনে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৭ জন। মারা গেছেন ৫৭ জন।
ইতালিতে মঙ্গলবারে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৩১৩। বুধবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ হাজার ২০।
ডেনমার্কে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ২২৮ জন। এর মধ্যে এক হাজার ২ শত ৫ জনের আগেই করোনা সংক্রমণ ছিল।

পর্তুগালে মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ১৭২। বুধবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৮শত ৬৭। অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ হাজার ২১৪ জন। মঙ্গলবার আক্রান্তের রেকর্ড ভঙ্গকারী সংখ্যা ছিল ১১ হাজার ৩০০। ফলে বুধবারের ওই সংখ্যা তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

গ্রিসেও একদিনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে সংক্রমণে। বুধবার সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ২৮ হাজার ৮২৮ জন।
কর্মকর্তারা মনে করছেন, উচ্চ হারে সংক্রমণের কারণ হতে পারে বড়দিনের অনুষ্ঠানমালা। এ উপলক্ষে মানুষের চলাচল বেড়ে গিয়েছিল। তারা দূর থেকে দূরে স্বজনের কাছে ছুটে গিয়েছেন। হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। ফলে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে অত্যাবশ্যক সেবাখাতে স্টাফ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।