পর্যটকদের ফাঁদে ফেলাই ছিল টর্নেডো আশিকের নেশা

আশিকুল ইসলাম আশিক ওরফে টর্নেডো আশিক। কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের ফাঁদে ফেলাই ছিল তার নেশা। বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেইল করতো আশিক। এ ছাড়াও আশিক ও তার সহযোগীরা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম করতো। তার চক্রের সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০ থেকে ৩৫ জন। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আছে অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজির ১২টি মামলা। সম্প্রতি কক্সবাজারে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে পর্যটক এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় ফেঁসে যায় এই চক্রটি। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে চক্রের মূল অভিযুক্ত আশিককে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরে ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে মামলা করেন। এজন্য গ্রেপ্তার এড়াতে দাড়ি, গোঁফ ও ভ্রূ কেটে আত্মগোপনে চলে যায় আশিক। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী ওই নারী তার স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাদের সঙ্গে ৮ মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান রয়েছে। শিশুটির জন্মগতভাবে হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ সংকুলানের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের নিকট হতে অর্থ সাহায্য চাইতো। এ সময় তিনি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২২শে ডিসেম্বর ওই নারী কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় তার স্বামী বাদী হয়ে ৪ জন এজাহার নামীয় আসামি ও আরও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ভুক্তভোগীকে অপহরণের পর তার স্বামী র‌্যাব-১৫ এর নিকটে তার স্ত্রীকে উদ্ধারে সহায়তা চান। অতঃপর র‌্যাব তার স্বামীকে নিয়ে উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। একপর্যায়ে ওই নারী উদ্ধার হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩শে ডিসেম্বর রাতে জিম্মি করতে সহযোগিতা করার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকেও গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
খন্দকার আল মঈন বলেন, আশিকুল ও তার সহযোগীরা ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের নিকট ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ওই নারী ও তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অতঃপর লাবণী বীচ এলাকার রাস্তা হতে ওই নারীকে সিএনজি’তে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রেপ্তারকৃত মো. আশিকুল ইসলাম ওই নারীকে ধর্ষণ ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটক করে রেখে ভিকটিমের স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এরপর তাকে হোটেলে আটকে রেখে সে হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। বিষয়টি ব্যাপকভাবে স্থানীয় পর্যায়েও বিভিন্ন মিডিয়াতে জানাজানি হলে গ্রেপ্তারকৃত আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আশিকুল তার বেশভূষা পরিবর্তন করে ঘটনার ২ দিন পর কক্সবাজার থেকে একটি এসি বাসে করে ঢাকায় আসে। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে সে মাদারীপুরের মোস্তফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার হয়।
র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, বিগত ২০১২ সাল হতে কক্সবাজার এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আশিক। সে প্রথম ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়। সে ও তার সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি,  চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতো। গ্রেপ্তারকৃত পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। সে পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট জোরপূর্বক কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করে মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকে। বিভিন্ন ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অবৈধ দখল করে ও চাঁদা দাবি করে থাকে। তার চক্রের সদস্যরা রাত্রিকালীন সময়ে সী-বীচে আগত ট্যুরিস্টদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতো। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে বিভিন্ন ট্যুরিস্টদের সুযোগ বুঝে ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতো। তার নামে ইতিমধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। ইতিপূর্বে সে ৫ বার পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয় এবং দীর্ঘদিন কারাভোগ করেছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।