পাইওনিয়ার ফাইভজি পার্টনার অ্যাওয়ার্ড পেলো হুয়াওয়ে বাংলাদেশ  

[ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১] দেশে ফাইভজি চালু করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আইসিটি অবকাঠামো প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়েকে পাইওনিয়ার ফাইভজি পার্টনার অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। গতকাল (১২ ডিসেম্বর) দেশের প্রথম ফাইভজি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের চিফ অপারেটিং অফিসার তাও গুয়াংইয়াও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রীর কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন।

 

রাজধানীর র‍্যাডিসন ব্লু ঢাকা ওয়াটার গার্ডেনে আয়োজিত ‘নিউ এরা উইথ ফাইভজি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাইভজি সেবা উন্মোচন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। অনুষ্ঠানে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. খলিলুর রহমান, বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এবং টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন, গ্রামীণফোন লিমিটেডের সিইও ইয়াসির আজমান এবং বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের সিইও এরিক অস। হুয়াওয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন এবং হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালভাবে যুক্ত হন এবং তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ফাইভজি উন্মোচনের সাথে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানান। অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও বার্তা প্রদান করেন।

 

প্রাথমিকভাবে, ছয়টি সাইটে ফাইভজি নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হবে। সাইটগুলো যেসব এলাকায়, তা হলো: বাংলাদেশ সচিবালয়, জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থল। উল্লেখ্য, এলাকাগুলোর সিংহভাগেই হুয়াওয়ের অবকাঠামোগত সেবা ব্যবহার করা হবে।

 

অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মূল বিষয় হচ্ছে কানেক্টিভিটি। কানেক্টিভিটির এ যুগে, সবকিছু এখন ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের নেটওয়ার্ক উন্নত না হলে আমরা পিছিয়ে পড়বো। আমি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি’কে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তারা ফাইভজি বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। ফাইভজি বাস্তবায়নে অবদান রাখার জন্য আমি হুয়াওয়েকেও ধন্যবাদ দিতে চাই। যদিও, এখন ফাইভজি এখন খুব অল্প জায়গায় চালু হয়েছে। ধীরে ধীরে ফাইভজি বাংলাদেশেও সব যায়গায় পৌঁছে যাবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে চলবো আর ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে থাকবে। আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা।”

 

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য একটি স্মরণীয় দিন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে যেখানে কেবল ৮ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং মাত্র ৪ কোটি মানুষের মোবাইল কানেকশন ছিল, সেখানে ১৩ বছরের মধ্যে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা এবং উন্নত প্রযুক্তির বিকাশ ঘটানোর জন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী ইকো পার্টনার হুয়াওয়েকে ধন্যবাদ।”

 

তিনি আরও বলেন, “আমাদের দেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের গুণগত মান নিয়ে যেসব অভিযোগ রয়েছে, সে ব্যাপারে আমি আমাদের বিভিন্ন অপারেটরদের সাথে নিয়ে সকলকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, নেটওয়ার্কের বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করি এবং এ ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করছি। ফাইভজি টুজি, থ্রিজি’র মতো আরেকটি প্রযুক্তি নয় এবং ফাইভজি গ্রহণ না করলে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলা করতে পারবো না। টুজি বা ফোরজি যেমন আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সক্ষম, ফাইভজি সেখানে শুধু মোবাইল সেটেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি ও চিকিৎসা সকল ক্ষেত্রে প্রসার ঘটাবে। ”

বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “বিটিআরসি’র কর্মীরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে শুরু থেকে নিরলসভাবে কাজ করেছে। ২০১৮ সালে সোনারগাঁ হোটেলে আমরা ফাইভজি’র একটি পরীক্ষা চালাই। তখন এবং আজকে ফাইভজি’র উদ্বোধনে হুয়াওয়েকে পাশে থাকার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশা করছি, আগামী বছর টেলিটকের পাশাপাশি গ্রামীণফোনসহ অন্যান্য অপারেটররা বাংলাদেশে ফাইভজি চালু করবে। তাদের জন্য নতুন তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে আমরা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আগামী মার্চ মাসে নিলামের পর তারা ফাইভজিতে পদার্পণ করবে বলে আশা করছি। ফাইভজি উদ্বোধনের কাজে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

 

টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, “আজ আমরা ফাইভজি যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আমাদের অনেকদূর যেতে হবে। আর হুয়াওয়ের মতো অংশীদারের সহযোগিতায় এটা নিশ্চিতভাবেই ঘটবে।”

 

হুয়াওয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বলেন, “বিশ্বজুড়ে ফাইভজি প্রযুক্তি স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে হুয়াওয়ে। হুয়াওয়ে বিশ্বের অনেক দেশে উন্নত ফাইভজি প্রযুক্তি চালু করার জন্য অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করছে। আমি বিশ্বাস করি, ফাইভজি প্রযুক্তির ব্যবহার ত্বরান্বিত করতে বাংলাদেশও আমাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দ্বারা উপকৃত হবে।”

 

হুয়াওয়ে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী ঝ্যাং ঝেংজুন বলেন, “বিগত ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে হুয়াওয়ে বাংলাদেশের আইসিটি ইকোসিস্টেমের পরিবারের সদস্য হিসেবে দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সম্পূর্ণভাবে সংযুক্ত ইন্টেলিজেন্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে আমরা সবসময় গ্রাহকের প্রয়োজন পূরণে তাদের পাশে ছিলাম। বাংলাদেশ ফাইভজি যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। হুয়াওয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এ মুহূর্তের অংশ ও সহযোগী হতে পেরে অত্যন্ত গর্বিত।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের বিশ্বাস ফাইভজি ব্যক্তিক্ষেত্রে, মানুষের বাড়িতে ও বিভিন্ন খাতে বিস্তৃত পরিসরের ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন নিয়ে আসবে। এবং হুয়াওয়ে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি সেবাদানের মাধ্যমে সবসময় বাংলাদেশকে সহায়তা করবে; কেননা, আমরা বাংলাদেশে আছি, বাংলাদেশের জন্যই।”

 

অনুষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে একটি ফাইভজি সাইট উন্মোচন করা হয়, যার মাধ্যমে অতিথিরা এআর/ভিআর ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নেন, ফাইভজি প্রযুক্তির উদ্ভাবনী ব্যবহারের বিভিন্ন ক্ষেত্র সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ৯৬৯ এমবিপিএস গতি ও ৪~১০ এমএস ল্যাটেন্সি উপভোগ করেন।