ছোট‌বেলা থে‌কেই পু‌লি‌শ হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন আছপিয়া

আছফিয়া শৃঙ্খলা বাহিনী, বি‌শেষ ক‌রে পু‌লি‌শে চাক‌রির স্বপ্ন দেখতেন ছোট‌বেলা থে‌কেই। আর তাই স্কুল ও ক‌লেজে স্কাউটের সঙ্গে জ‌ড়িত ছি‌লেন।

শুক্রবার দুপু‌রে এমনটাই জা‌নি‌য়ে‌ছেন পুলিশের প্রতিবদনে ‘ভূমিহীন’ হিজলার বা‌সিন্দা আছপিয়া ইসলাম কাজল।

তি‌নি ব‌লেন, হিজলা উপ‌জেলা সদ‌রের টি‌টিএন‌ডি‌সি ম‌ডেল সরকা‌রি প্রাথ‌মিক বিদ্যালয় থে‌কে প্রাথ‌মি‌কের গ‌ণ্ডি পার হ‌য়ে বি‌সি‌ডি মাধ্য‌মিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ২০১৮ সা‌লে এসএস‌সি পাস ক‌রেন। এরপর সরকা‌রি হিজলা ডি‌গ্রি ক‌লেজ থে‌কে মান‌বিক বিভা‌গে এইচএস‌সি পাস ক‌রে বাংলা‌দেশ পু‌লি‌শের নি‌য়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। সেখা‌নে সব পরীক্ষায় যোগ্য হিসেবে উত্তীর্ণ হ‌ন। কিন্তু পু‌লিশ ভে‌রি‌ফি‌কেশ‌নে গি‌য়ে জান‌তে পা‌রে হিজলা‌তে তা‌দের কোনো জ‌মি নেই। এ কারণে তার চাকরি হ‌বে না।

তি‌নি ব‌লেন, যখন প্রথম খবরটা পাই তখনকার অনুভূ‌তিটা ব‌লে বোঝা‌তে পার‌বে না। তবে আমি হাল ছাড়‌ছি না, চা‌লি‌য়ে যে‌তে চাই লেখাপড়া। সেই সঙ্গে চাক‌রি পাওয়ার চেষ্টা। পু‌লি‌শে চাক‌রি ক‌রে দেশ ও মানু‌ষরে সেবা করার স্বপ্ন আমার ছোট‌বেলা থে‌কেই ছি‌ল। কারণ এটা আমার বাবারও ইচ্ছা ছি‌ল।

তি‌নি ব‌লেন, চাক‌রিটা হ‌লে মা, ভাই-বোন‌দের একটু ভা‌লো রাখ‌তে পার‌বে। কারণ বাবার মৃত্যুর পর মা আর ভাইই আমাকে লেখাপড়া চা‌লি‌য়ে নি‌তে সাহায্য কর‌ছেন।

মা ঝরনা বেগম জানান, ২০১৯ সা‌লে আস‌পিয়ার বাবার আক‌স্মিক মৃত্যুর পর সব‌কিছু ওলট পালট হ‌য়ে যায়। তি‌নি স্থান‌ীয় অপু চৌধুরীর মি‌লের ম্যা‌নেজার ছি‌লেন। তি‌নিই আমা‌দের বর্তমান ঘ‌রে থাকার ব্যবস্থাও ক‌রে দি‌য়ে‌ছেন। মে‌য়েটার চাকুরি হ‌লে আমা‌দের ভা‌গ্যের পরিবর্তন ঘট‌তো।

এ সময় তি‌নি জানান, শুকবার ইউএনও ডে‌কে আম‌া‌দের জ‌মি ও ঘর দেওয়ার কথা ব‌লেছেন। আর ঘর পে‌লে স্থায়ী ঠিকানার যে সমস্যা আছে, তাও ঠিক হ‌য়ে যা‌বে। সে ক্ষে‌ত্রে সরকার প্রধানের কা‌ছে অনু‌রোধ আমার মে‌য়ের স্বপ্নটা যেন পূরণ হয়।

এদি‌কে ঘর পে‌লে পু‌লি‌শে চাকরি হওয়া নিয়ে শঙ্কার অবসান অনেকটাই ঘট‌বে ব‌লে ম‌নে কর‌ছেন স্থানীয়রা। তার পরিবারকে ঘর ও জমি দেওয়ার কথা শু‌নে এরই ম‌ধ্যে স্থানীয়রা প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসন‌, উপ‌জেলা প্রশাসন‌কে সাধুবাদ জা‌নি‌য়ে‌ছেন।

স্থানীয় বা‌সিন্দা হারুন অর র‌শিদ ব‌লেন, দীর্ঘ‌দি‌নের প্র‌তি‌বেশী আছপিয়া ও তার প‌রিবার‌কে চি‌নি। ওরা অনেক ক‌ষ্ট করে বড় হ‌য়ে‌ছে। ওর বাবা নিতান্ত সৎ মানুষ হওয়ায় কিছু ক‌রে যে‌তে পা‌রেন‌নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ঝন্ট‌ু বেপারী ব‌লেন, আশপা‌শের সবার এখন একটাই চাওয়া আছ‌পিয়ার চাক‌রিটা যেন হয়। এলাকার কেউ বল‌তে পার‌বে না যে এ প‌রিবারটা খারাপ। সবার সঙ্গে যেন ভা‌লো সম্পর্ক।

উল্লেখ্য, গত ১০ সেপ্টেম্বর বরিশাল জেলায় পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দফতর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে টিআরসি পদে ৭ জন নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আছপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।

২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানে কৃতকার্য হন আছপিয়া। তবে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এই নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। বুধবার (৮ ডিসেম্বর) হিজলা থানার এসআই মো. আব্বাস ভেরিফিকেশনে আছপিয়া বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দেন।