স্বধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ইন্দ্রিরা গান্ধীর ১০৫তম জন্মদিন অনুষ্ঠানে মেয়র
মহান স্বধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ সহায়তাকারী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধীর ১০৫তম জন্মদিন বর্ণাঢ্যভাবে পালন করেছে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব। আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আলহাজ্ব আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সঞ্চালনায় এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ভারতের সহকারী হাই কমিশনার শ্রী অনিন্দ্য ব্যানার্জী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম, চট্টগ্রমে প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি সালাউদ্দিন মো: রেজা, বিএফইউজের সহ সভাপতি শহীদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহসিন কাজী, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক ম শামসুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তবে ্যসিটি মেয়র এম রেজাউল করিম বলেন, ৭১ সালে পাকিস্তানী শক্তিশালী সেনা বাহিনী নিরস্ত্র সাধারণ বাঙ্গালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ভিতু বাঙ্গালী বলতেন। সেইভিতু বাঙ্গালী বঙ্গবন্ধুর আহবানে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চরম প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ৭১ আমাদের অস্ত্র ছিলনা, কিন্তু ছিল অটুট মনোবল।
মেয়র আরো বলেন, নেপোলিয়ন যথার্তই বলেছেন, যে দলের নেতা ভেড়া, কিন্ত সৈন্যরা সব সিংহ হলেও যুদ্ধে তারা জয় করতে পারেনা। তবে যেই দলনেতা সিংহ এবং সদস্যরা ভেড়া হলেও তাদের জয় নিশ্চিত। আমাদের সিংহ পুরুষ বাঙ্গালী জাতির হাজার বছরের স্বাধীনতার স্বপ্ন লালিত স্বাধীনতার কা-ারী বঙ্গবন্ধু সিংহ হয়েই আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছেন বলেই মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর যোগ্য নেতৃত্বকে শানিত করেছেন ভারতের তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বাঙ্গালীর পরম বন্ধু শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তিনি যদি এক কোটির বেশী বাঙ্গালীকে আশ্রয় না দিতেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ না দিতেন, প্রবাসী সরকার গঠনের সুযোগ করে না দিতেন, তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আরো অনেক বেশি রক্ত প্রবাহিত হতো।
তিনি আরো বলেন, শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা নয় স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। তা নাহলে আমরা হয়তো আমাদের এই মহান নেতাকে ফিরে পেতাম না। প্রকৃত বন্ধুত্বের প্রমাণ হয় সুখে দুঃখে রাজার আলয়ে। ভারত আমাদের চুক্তিকৃত বন্ধুনয়, দূর্দিনে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিয়ে চির আপন হয়েছেন।
চট্টগ্রামে প্রেসক্লাবের এই আয়োজনের প্রসংশা করে মেয়র বলেন, যা কিছু ভাল তার শুরু চট্টগ্রাম থেকেই। মুক্তিযুদ্বের আদর্শে লালিত চট্টগ্রামে প্রেসক্লাব থেকে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর ১০৫তম জন্মদিনের এই নান্দনিক আয়োজন সেটা আবারাও প্রমান করলেন।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে শ্রী অনিন্দ্য ব্যানার্জী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। তারা শুরুকরে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। কোটি মানুষ প্রাণের ভয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেআশ্রয় নেয়। তখন ইন্দিরা সরকার তাদের খাদ্য ও জীবনের নিরাপত্তা দেয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরের আ¤্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকার তখন পাকিস্তানি বাহিনীর ক্রমাগত আক্রমনে সরকার পরিচালনা কঠিনহয়ে পড়লে এগিয়ে আসেন ইন্দিরা গান্ধী। তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করে অস্থায়ীভাবে সরকার পরিচালনার সব ব্যবস্থা করে দেন। কলকাতা অবস্থান করেই প্রবাসী সরকার পৃথিবীব্যাপী স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গড়ে তোলেন। শুধু তাইনয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র গঠন করে বিশ্বের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি সংবাদ গান আবৃত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণার ব্যবস্থা করেন শ্রীমতি গান্ধী। এই সময় দিল্লীতে দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব বাংলাদেশের আয়োজনের ব্যবস্থা করেন তিনি। এই সম্মেলনে ৮০ দেশের ৭০০ জনপ্রতিনিধি অংশ নেয়। পরবর্তীতে তিনিবিশ্ব জনমত গঠন ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবীতে বিভিন্ন দেশে চিঠি প্রেরণ করেন। তিনি ৭১এ পূর্ববঙ্গ থেকে আশ্রয় নেয়া সকলবাঙালিদের ভারতে আশ্রয় দিয়ে তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ১৯৭১ এর সেপ্টেম্বরে সব সমস্যা মোকাবেলা করে তিনিই স্বীকৃতি দেন বাংলাদেশকে। এই মহিয়সি নারীর জন্মদিন পালন করায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা ও সকল সদস্যকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব আলী আব্বাস বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় নিরলস কাজকরে যাচ্ছেন। ক্লাবের নিত্য কাজের বাইরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে উজ্জিবিত করতে প্রচার করে থাকে। তিনি আগামীতে চট্টগ্রামে প্রেসক্লাবে ইন্দিরা গান্ধীকর্ণার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণাদিয়েবলেন, আমরা বিষয়টি সাধারণ সভায় উপস্থাপন করে সদস্যদের সম্মতি পেলেই তা বাস্তবায়ন করবো। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে কোটির বেশী বাঙালিকে ভারতেআশ্রয় ও তাদের থাকা খাওয়ারব্যবস্থা স্মরণকরে দিয়ে বলেন, ইন্দিরা গান্ধী এগিয়ে নাআসলে দেশ স্বাধীন হতো কিনা তানিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে। চট্টগ্রাম শহরে একটিইন্দিরা গান্ধী স্কয়ার বা কর্ণার করারজন্য তিনি সিটি মেয়রকে অনুরোধ জানান।











