আরব আমিরাতে থেমে গেছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস

আরব আমিরাতে অবস্থিত বিশ্বের সু-উচ্চ ভবন বুর্জ খলিফার চূড়াতেও জমতে শুরু করেছে ধুলা। রাস্তার পাশের গাছগুলোতে ধীরে ধীরে তামাটে বর্ণ ধারণ করতে শুরু করেছে। দিনের আলোতে এতটাই তাপ যে কেউ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে চান না। পর্যটকরাও দারুণ বিরক্ত। বাধ্য হয়েই সবশেষ এখানে কোটি কোটি ডলার খরচ করে ৪ মাস আগে ঘটানো হয়েছে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত। যার ছিটাতে মিলেছিল খানিকটা স্বস্তি। সেই সঙ্গে সবাই আকাশে তাকিয়ে আছে চাতক পাখির মতো কবে হবে প্রাকৃতির কান্না। দুই বছর ধরে এখানে যে বড্ড নিষ্ঠুর মেঘগুলো মুখ ফিরিয়ে আছে।
তাই গতকাল হঠাৎ করেই বৃষ্টির প্রার্থনায় জুমার দিনে মসজিদে মসজিদে আলাদা করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের ঘোষণা দেন আরব আমিরাত সরকার। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড তো এমন বৃষ্টির আশায় হয়তো নেই। কারণ তারাতো অপেক্ষায় অন্যরকম এক ফাইনালের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম তাসমান সাগর পাড়ের দুই প্রতিবেশী মুখোমুখি হচ্ছে। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে আয়োজক অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের দেখা হয়েছিল প্রথম কোনো বৈশিক আসরে। সেবার জয় তুলে নিয়েছিল অজিরা, অন্যদিকে এবার প্রতিশোধের অপেক্ষাতে ব্ল্যাকক্যাপসরা।

 

অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে থেমে গেছে বিশ্বকাপের আনন্দ উচ্ছ্বাস। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ভারত ও সবশেষ পাকিস্তানও বিদায় নিয়েছে। দুবাই শহরে যেন এক রাতেই হারিয়ে গেছে বিশ্বকাপের সব শেষ উন্মাদনা। এখানকার পাকিস্তান পাড়াতে শুধু পতাকাগুলোই উড়ছে। করাচি বদবার রেস্টুরেন্টের শাখাগুলোতে নেই উপচে পড়া ভিড়। আলোচনা-সমালোচনা চলতে তাও শান্ত কণ্ঠে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে ফাইনালে দর্শক নিয়েও। কারণ কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ভীষণ কড়াকড়ি। দেশ থেকে বের হলেই আসা-যাওয়াতে ১৫ দিনের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত। তাই এবার দুটি দেশের সমর্থক এমনকি সংবাদ কর্মীদের সংখ্যাটাও একেবারে কম। আর সেখানে যদি সবার প্রার্থনার জোরে বৃষ্টি ঝড়ে ফাইনাল তো আরও বিষাদময় হয়ে উঠবে।

 

নিউজিল্যান্ড দল এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরসহ তিনবারই সেমিফাইনাল খেলেছে। এর আগে দুইবার ২০১৭ ও ২০১৬ সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। এবারই প্রথম তারা ফাইনাল খেলছে। তাই তাদের জন্য এবারই সুযোগ প্রতিবেশী অজিদের হারিয়ে এই আসরে প্রথম শিরোপা জিতে নেয়ার। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শেষ ফাইনাল খেলেছে ২০১০-এ। সেবার তারা হেরেছিল ইংল্যান্ডের সঙ্গে। ৫টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা দলটির ক্রিকেটের এই রঙিন ফরম্যাটে নেই কোনো শিরোপা। তাই তারাই সেই আক্ষেপ দূর করতে মাঠে নামবে মরিয়া হয়েই।

 

চলতি আসরের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অজিরা হারিয়ে দিয়েছে উড়তে থাকা পাকিস্তানকে। ১৭৭ রানের লক্ষ্যে নেমে ছয় বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় অজিরা। ১৮তম ওভারের শেষ তিন বলে পর পর তিনটি ছয় হাঁকিয়ে চোখের পলকেই দলকে ফাইনাল উপহার দেন ম্যাথু ওয়েড। অথচ তার আগের বলেই তাকে ক্যাচ ফেলে জীবন দিয়েছিলেন হাসান আলী। আর দলকে জিতিয়ে তার ক্রিকেটেও হয়েছে পুনর্জন্ম। ১৬ বছর বয়সেই ক্যান্সারে ভুগে ভুগে ক্রিকেটই যে ছাড়তে বসেছিলেন ওয়েড। পার্লারের চাকরির জন্য নিয়েছিলেন এক বছরের ট্রেনিংও। কিন্তু মাত্র দুটি ক্যামোথেরাপিতেই তার ক্যান্সার ভালো হয়ে যায়। ফিরে আসেন ক্রিকেটে। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সব শেষ বাংলাদেশ সফরে হন দলের অধিনায়কও। যদিও সেই দলে অজিদের বি দলেই তারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে পাঁচ ম্যাচে করেন ৪২ রান। অথচ ১৭ বলেই ৪১ রানের ঝড় তুলে দলকে ফাইনালের বন্দরে নিয়ে হিরো বনে যান। এবার অপেক্ষা অজিদের শিরোপার উদ্‌যাপনে। ম্যাথুও অপেক্ষায় আছে আবারো নায়ক হয়ে ওঠার। আর এমন ফাইনালের আগে আরব আমিরাতবাসী অপেক্ষায় এক পশলা বৃষ্টির।