জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আপনি যে তিনটি কাজ করতে পারেন

বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্বনেতাদের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সম্মেলন কপ ২৬-এ সে চেষ্টা চলছে। তবে ব্যক্তিপর্যায়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে প্রত্যেকেরই অনেক কিছু করার আছে। সেখান থেকে তিনটির উল্লেখ থাকছে এখানে।
খাদ্যের অপচয় এবং লাল মাংস গ্রহণ কমাতে হবে
মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের ১৪ শতাংশের পেছনে কারণ গবাদিপশু। এর ক্ষতিকর প্রভাব কমানোর সহজ এবং সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো খাদ্যতালিকা থেকে মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার কমিয়ে ফেলা। নিরামিষাশীদের জন্য সেটা নিঃসন্দেহে সুখবর। তবে আরও অনেক কিছু ভেবে দেখতে হবে এখানে।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অ্যাবারডিনের জীববিজ্ঞানী অধ্যাপক মার্গারেট গিল বলেন, এটা কেবল কোনো সুনির্দিষ্ট পণ্যের ভালো কিংবা খারাপের প্রশ্ন নয়। যেকোনো খাদ্যের কার্বন পদচিহ্ন নির্ভর করে কীভাবে সেটা তৈরি করা হয়েছে, কোথা থেকে এসেছে এবং এটা মৌসুমি কি না, তার ওপর।

জলবায়ু পরিবর্তনের সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেন জোনাথান ফলি। বিবিসিকে তিনি বলেন, আপনি পরিমাণ বুঝে রান্না করে অপচয় কমাতে পারেন, সেটা সাশ্রয়ীও। খাবার যা বাঁচবে, তা পরবর্তী সময়ের জন্য রেখে দিতে পারেন। ব্রিটিশ সংস্থা ওয়েস্ট অ্যান্ড রিসোর্স অ্যাকশন প্রোগ্রামের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বের মোট খাদ্যের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অপচয় হয়।

ব্যক্তিগত গাড়িচালনা এবং বিমানভ্রমণ কমাতে হবে
বিশ্বব্যাপী কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের প্রায় এক-চতুর্থাংশের পেছনে দায়ী পরিবহন। ইমপিরিয়াল কলেজ লন্ডনের নিল জেনিংসের মতে, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া জীবনযাপন সম্ভবত পরিবহন খাতের কার্বন নিঃসরণ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া চলা সম্ভব হয় না। সেসব ক্ষেত্রে ছোট ছোট পদক্ষেপও বেশ কাজের হতে পারে, যেমন কাছের কোথাও হলে হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে সেখানে।

ইদানীং বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ছে। তবে দাম সবার হাতের নাগালের মধ্যে নয়। তা ছাড়া সত্যিকার ‘গ্রিন ট্রাভেল’ হতে হলে সে বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে হবে বিদ্যুতের পরিবেশবান্ধব উৎস থেকে, যেমন বায়ুকল কিংবা সৌরশক্তি।

দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হলো, দূরপাল্লার ভ্রমণ সব সময় বিমানভ্রমণ ছাড়া সম্ভবও হয় না। তবে বিমানভ্রমণে প্রতি কিলোমিটারে যাত্রীপ্রতি কার্বন নিঃসরণের হার সবচেয়ে বেশি অভ্যন্তরীণ রুটে। এর বদলে সম্ভব হলে ট্রেনে ভ্রমণ করা ভালো, খরচও সচরাচর কম।

কিছু কেনার আগে ভাবুন
জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, এক জোড়া জিনস তৈরিতে তুলা উৎপাদন, পোশাক তৈরি, পরিবহন এবং ধোয়ার পেছনে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৭৮১ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। এই অপচয় কমানোর জন্য পোশাকের ছোটখাটো খুঁত সারিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। পুরোনো পোশাক ফেলে দেওয়ার বদলে কাউকে দান করে দিতে পারেন। আবার দীর্ঘদিন টেকার মতো উচ্চমানের পোশাকও কিনতে পারেন। প্রয়োজনে পুরোনো পোশাক কিনে ব্যবহার করতে পারেন।

হোম অ্যাপ্লায়েন্স কেনার সময় একটু সচেতন হলে কার্বন পদচিহ্ন কমানো সম্ভব। যেমন নতুন ওয়াশিং মেশিন বা এসি কেনার সময় সেটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কি না, তা দেখে নিতে পারেন।

আর বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে অযথা ঘরের লাইট-ফ্যান এবং অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ চালু না রাখলে একদিকে যেমন খরচ কমবে, অন্যদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে আমাদের অবদানও বাড়বে।

সূত্র: বিবিসি