চবিতে সংঘর্ষের পর অবরোধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা ছাত্রলীগের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পরও ক্যাম্পাসে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। তবে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা বরদাশত করা হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে চবি কর্তৃপক্ষ।

এর আগে গত ২ এপ্রিল শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ সিএফসি ও বিজয়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন আহত হন, আটক হন ছয়জন। পরে আটক ছয়জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলা দায়ের করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

এর জের ধরে শনিবার কারাগারে থাকা ছয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দায়ের করা অস্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবরোধের ঘোষণা দেয় প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী ছাত্রলীগের একাংশ। রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে শিক্ষার্থীদের বহনকারী শাটল ট্রেন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের পরিবহন আটকে দিয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শুরু করে ছাত্রলীগ। এরপর সকাল ১০টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দিয়ে অবরোধ শুরু করে। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রম।

দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ মূল ফটক থেকে শিক্ষার্থীদের সরাতে গেলে উভয়পক্ষে সংঘর্ষ শুরু হয়। নেতাকর্মীরা জিরোপয়েন্ট ও আবাসিক হলের সামনে কাঠের গুড়িতে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ লাঠিচার্জের পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। জলকামান থেকে পানি নিক্ষেপ করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টাও করে পুলিশ। প্রায় একঘন্টা পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরে যেতে বাধ্য হন।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) এইচ এম মশিউদ্দোলা রেজা বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের আমরা বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। শিক্ষকরা এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা কারও কথা শোনেননি। কিছু অছাত্র পুলিশের সাথে হাতাহাতি করতে আসলে আমরা লাঠিচার্জ ও জলকামান দিয়ে জল নিক্ষেপ করে তাদের সরিয়ে দেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

এদিকে সংঘর্ষের সময় ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মোখলেস এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের রমযান এবং আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সাদী মোরশেদকে আটক করে পুলিশ।

আহতদের মধ্যে ৭ জনকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। তবে তাৎক্ষনিকভাবে আহতদের নাম পাওয়া যায় নি। আহতদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য রয়েছেন।

সংঘর্ষের পর লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আন্দোলনের আমাদের নীতিগত সমর্থন আছে। লাগাতার অবরোধ চলবে।’

সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে চাইলে চবি’র উপচার্য অধ্যাপক ড.ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আন্দোলনকারীরা যদি যৌক্তিক দাবি করে তাহলে তাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু অযৌক্তিক দাবিতে কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করতে দেওয়া হবে না।

প্রক্টর অধ্যাপক মো.আলী আজগর চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে অবরোধ কর্মসূচির প্রথমদিনে রোববার সকালে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে লোকোমাস্টারকে (চালক) তুলে নিয়ে হোসপাইপ কেটে শাটল ট্রেন আটকে দেয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। নিরাপত্তা না থাকায় বাকি দুটি ট্রেনও শিক্ষার্থীদের নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেনি।

এছাড়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চবি’র পরিবহন পুলে গিয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বহনকারী কয়েকটি বাসের চাকা ফুটো করে দেয়। এতে কোনো বাসও শহর থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিতে পারেনি।

এরপর প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে রাখায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক বা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বহনকারী কোনো যানবাহনও যেতে পারেনি ক্যাম্পাসে। বন্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম।