ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান কিউকম প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে লক্ষাধিক পণ্য কেনাবেচা করে আসছিল মো. রিপন মিয়া। আর কোম্পানির ব্র্যান্ডিং করতে লোভনীয় অফারে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতো।
এতে আকৃষ্ট হয়ে প্রচুর ক্রেতা কিউকমে অর্ডার করেন। শেষ পর্যন্ত মোটরসাইকেল না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা।
কিউকমের মাধ্যমে শুধু গ্রাহকদের কাছ থেকে ২৫০ কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানের সিইও মো. রিপন মিয়া। এছাড়াও পণ্য না দিয়ে গ্রাহকদের চেক দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান (তৃতীয় পক্ষ) ফোস্টারের (Foster) নজরে আসে। এতে কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা ফ্রিজ করে (আটকে) দিয়েছে ফোস্টার।
সম্প্রতি ই-কমার্স ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল ‘কিউকম’৷ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের সিইও মো. রিপন মিয়াকে গ্রেফতার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ।
সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের পর কিউকমের সিইও মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে পল্টন মডেল থানায় দুটি ধারায় মামলা করেছেন এক ভুক্তভোগী গ্রাহক। একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে, অপরটি প্রতারণার অভিযোগে।
তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটে। নাগরিকরাও এতে অভস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে বেশ কিছু বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভালোভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। কিউকমও করোনাকালীন তাদের ব্যবসা শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে কিউকমের অনেক ক্রেতাই পণ্য অর্ডার করে প্রতারিত হয়েছেন।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, মো. রিপন মিয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, কিউকম প্লাটফর্মে ব্যবহার করে তিনি লক্ষাধিক পণ্য অনলাইনে কেনাবেচা করেন। বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে কিউকম কম দামে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেয়। বাজারে যে মোটরসাইকেলের দাম ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, সেটি তারা ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রির বিজ্ঞাপন দিতেন। কিন্তু অর্ডার অনুযায়ী মোটরসাইকেল ডেলিভারি না দিয়ে গ্রাহকদের ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার চেক দিতেন। যদিও কোনো গ্রাহক তাদের টাকা পায়নি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাস থেকে এস্ক্রো সিস্টেম (Escrow System) চালু করে। এর অধীনে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পেমেন্ট গেটওয়ে সিস্টেম চালু হয়। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ফোস্টার (Foster) নামে একটি কোম্পানিকে এ দায়িত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নিয়ম অনুযায়ী গ্রাহকের পেমেন্টটি ফোস্টারের কাছে থাকবে, পণ্য ডেলিভারি পর পেমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠাবে ফোস্টার। কিউকমের পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে চেক প্রদানের বিষয়টি ফোস্টারের নজরে আসে। পরে ফোস্টার কিউকমের সব পেমেন্ট আটকে দেয়। ফোস্টার এখন পর্যন্ত কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকার মোটরসাইকেলের পেমেন্ট আটকে দিয়েছে বলে রিপন মিয়া পুলিশের কাছে দাবি করেছে। এছাড়া তার কাছে গ্রাহকদের পণ্য ডেলিভারির ২৫০ কোটি টাকা আছে।
মামলাটি তদন্ত চলছে এবং অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ড আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।
রিপন মিয়ার ব্যাংকে কত টাকা আছে এবং গ্রাহকদের কীভাবে টাকা ফেরত দেবে ডিবিকে তা জানিয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে সে বলেছে, গ্রাহকদের টাকা ফিরিয়ে দিতে পারবে এবং এ সমস্যা থেকে বের হয়ে যেতে পারবে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো বড় ধরনের মূল্যছাড় দিয়ে এ কাজগুলো করছে। অর্থাৎ অ্যাগ্রেসিভ মার্কেটিং পলেসি নিয়ে তারা প্রতারণার কাজগুলো করছে। জনগণের স্বার্থে আমরা ই-কমার্স সাইটগুলোকে ধরছি। হাতেগোনা ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান অনিয়ম করছে, আমরা তাদের ধরছি। আশা করছি যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ই-কমার্সের সুফল পাবেন নাগরিকরা। তবে মামলা হলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি, এছাড়া নয়।
কিউকমের ৩৯৭ কোটি টাকা ফোস্টারের কাছে আছে। সে ক্ষেত্রে গ্রাহকদের টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু এটা শুধুমাত্র মোটরসাইকেলের টাকা, মোটরসাইকেল ডেলিভারি যারা দিয়েছেন তাদের টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
কিউকমের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ঠিক কী অভিযোগ করছেন জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, তিনি বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল অর্ডার করে পেমেন্ট দিয়েছেন। কিন্তু পেমেন্ট দেওয়ার পরও পণ্য ডেলিভারি পাননি। তাকে গ্রেফতারের পর প্রচুর ভুক্তভোগী পুলিশের কাছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছেন। সে এখন মালামাল না দিয়ে চেক দেওয়া শুরু করেছে। এছাড়া চেক দিয়ে তিনি গ্রাহকদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার বরখেলাপ করেছেন।
যারা ই-কমার্স প্রতারণায় গ্রেফতার হয়েছে তারা ছাড়াও অন্য প্রতারকদের বিষয়ে ডিবি পদক্ষেপ নেবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতারণা যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং নেব। সম্প্রতি দেখা গেছে অনেকে অনলাইনে টাকা ঋণ দিয়ে সুদের ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব।