প্রকৌশলীকে ‘থাপ্পড়’ মারার প্রশ্নই আসে না: নাছির

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রকৌশলী বেয়াদবি করায় বকা দিয়েছেন দাবি করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘থাপ্পড় মারার প্রশ্নই আসে না। বকাঝকা করেছি।’

সোমবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় আন্দরকিল্লার নগর ভবনের তৃতীয় তলায় সম্মেলন কক্ষে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ৬ প্রকৌশলীর সঙ্গে আলোচনার একপর্যায়ে ওই প্রকৌশলীর কথা কাটাকাটি হয় মেয়রের সঙ্গে। এরপর তিনি অভিযোগ করেন তাকে ‘থাপ্পড় মেরেছেন’ মেয়র।

‘বাজার বসিয়ে অপরাধ আড়াল করার জন্য থাপ্পড় মেরেছি বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কর্মবিরতি পালন করছে। একটি চক্র আছে।’

মেয়র প্রশ্ন করেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উপস্থিত থাকাবস্থায় সে (উপ-সহকারী প্রকৌশলী) কেন কথা বলবে? সে তো কথা বলতে পারে না। সে আসারও তো দরকার নেই। কথা বলার জন্য আসবে তো একজন। তাদের দূরভিসন্ধি ছিল। আমাদের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছে। এটা স্পষ্ট।

২০১০ সালের ২৬ মে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেনের সই করা একটি চিঠির কপি দেখিয়ে মেয়র বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে চট্টগ্রামের হালিশহর হাউজিং সোসাইটির অধীন বড় পোল রাস্তা সংলগ্ন পরিত্যক্ত স্থানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাঁচাবাজার বসানোর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু অনুমোদন পাননি। কিন্তু ঝুপড়ি টাইপের কাঁচাবাজার চলেই আসছে। মহিউদ্দিন (এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) ভাইয়ের আমলে একবার উচ্ছেদ করা হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরও একবার উচ্ছেদ করেছিলাম। তিন-চার বার উচ্ছেদের পর আবার বসে যায়।

কাল ওই এলাকার কিছু সম্মানিত ব্যক্তি এসেছিলেন। তাদের শঙ্কা ড্রেন যদি সোজা না হয় তবে আসন্ন বর্ষায় পানি উঠবে। তখন আমি আমাদের প্রকৌশলী তৈয়বকে জিজ্ঞেস করি। তিনি জানায়, হাউজিং বাধা দেওয়ায় নালাটি করা যাচ্ছে না। আমি বলি, নালা তো করতেই হবে। নইলে সুফল পাবে না এলাকাবাসী। সোমবার কাজ ধরার পর আবার বাধা দেয়। তখন আমি সন্ধ্যায় ইফতারের পর আসতে বলি আলোচনার জন্য। আমি বলি, নগরবাসী জলাবদ্ধতার জন্য চরম ভোগান্তিতে আছেন। নালাটি যদি আমরা করতে না পারি তাহলে মানুষকে স্বস্তি দিতে পারবো না। ড্রেনটি যদি সংযুক্ত না হয় তবে পুরো সড়কে পানি উঠে যাবে। চসিক জনস্বার্থে নালাটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আলোচনার একপর্যায়ে পেছন থেকে একজন বলে, ১২০ ফুট জায়গা হস্তান্তর করা হয়েছে চসিকের কাছে। এর বাইরে চসিক আসতে পারবে না।

তখন আমি বুঝিয়ে বলি, সে তখন বলে সিটি করপোরেশনের জায়গা হকাররা দখল করে আছে। তখন আমি বলি, যেটি জিজ্ঞেস করা হচ্ছে সেটি বলবেন। আপনারা বেয়াদবি করার দুঃসাহস কোত্থকে পেলেন। আসল কথা হচ্ছে বাজার থেকে নিয়মিত টাকা আয় করতো। বাজার তুলে দেওয়ায় তাদের সমস্যা। জনগণের স্বার্থ তাদের বিবেচ্য নয়। আসলে নালাটি করা জরুরি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন শহরে সব নালা করতে। যাতে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারে। যোগ করেন মেয়র।

নালা সোজাই হবে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, নালা কোনোভাবেই বাঁকা করা যাবে না। নালা বাঁকা হলে পানি আটকে যাবে। যখন নালায় উপচে সড়কে পানি উঠবে, বাড়িঘর ডুবে যাবে। সব দোষ হবে মেয়রের। দিনশেষে আমি দায়ী হবো। আমি দেশের স্বার্থে কাজ করছি। অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য মিথ্যে অভিযোগ করছে। কারণ তাদের স্বার্থে আঘাত এসেছে।

প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করবেন কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ওই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগসহ যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। যা যা করার দরকার আমরা করবো। প্রশাসনিক অ্যাকশন নেবো। সে অপরাধ করে আসছে অনেক বছর ধরে।

মেয়র বলেন, আমাদের কেউ জানায়নি সড়কের কিছু অংশ বাইরে গেছে। জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে সড়কের জন্য। কাঁচাবাজার বসার জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অনুমোদন দেননি। এটা তো পরিত্যক্ত জায়গা না। বাজার দেওয়ার এখতিয়ার আছে চসিকের। জনস্বার্থের নালা নির্মাণকাজে বাধা দিতে পারেন না। মাঠে বাধা দিতে পারে না। বক্তব্য থাকলে লিখিতভাবে জানাবেন। তাদের কাজ তো কাঁচাবাজার বসানো না, গৃহায়ণ করা। অনুমোদন ছাড়া বাজার বসাবে কেন?

মেয়র অভিযোগ করে বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের হয়রানির কথা কেউ না জানার কথা না। একটি জায়গা অনেকবার বিক্রি করে। এক ভদ্রলোক আমাকে বলেছে, আমাদের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা নিয়েছে।