ফিশিং ট্রলার গুলো থেকে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

গত শীত মৌসুমের পর কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্রে ইলিশের দেখা আর তেমন মিলেনি। তার উপর গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ হতে ৩০ জুলাই পর্যন্ত চলে ইলিশ শিকারে সরকারের নিষেধাজ্ঞা। এসব মিলিয়ে বাজারে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত ছিলো মাছের রাজা ইলিশ। কিন্তু কয়েকদিন ধরে কক্সবাজার ফিশারি ঘাটে ফেরা ফিশিং ট্রলার গুলো থেকে নামছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। আহরিত ইলিশের সিংহভাগই বড় ও মাঝারি সাইজ। এতে দামও ভালো পাচ্ছেন ট্রলার মালিকরা।

চলতি মাসের শুরু হতে সাগরে ইলিশ শিকারে ট্রলার পাঠালেও মালিক ও জেলেদের মনে চরম হতাশা কাজ করছিল। মাছ শিকার শেষে তীরে ফেরার কালে বেশ কয়েকটি ট্রলার জলদস্যুর কবলে পড়ায় এ আতংক বলে জানিয়েছিলেন জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।

কিন্তু তিনদিন ধরে তীরে ফেরা ট্রলার থেকে কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ নেমে অবতরণ কেন্দ্র টইটম্বুর হওয়ায় সাগরে দস্যুদের কারণে হওয়া পেরেশানি উড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন একটি ট্রলার মালিক ও মাছ ব্যবসায়ী মঈন উদ্দিন।

তার মতে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জেলেদের জালে ধরা পড়ছে কাঙ্খিত রূপালী ইলিশ। ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরছে জেলেরা। ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছ রূপচাঁদা, লইট্যাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। আড়তগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য। এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের শত পিস ইলিশ এক লাখ ১০ বা ২০ হাজারে বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দুদিন এ দাম এক লাখ ৪০ হাজার পর্যন্ত গেছে। সে হিসেবে কেজি এক হাজার থেকে ১২-১৪শ’ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। ট্রলার আরো ফিরলের এ দাম আরো কমবে বলে ধারণা ব্যবসায়ী মাইন উদ্দিনের।

বুধবার সকালে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। টানা কয়েক মাস পর কোলাহলহীন থাকা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। অনেকদিনের হতাশার চিত্র সম্প্রতি পাল্টেছে। সাগর থেকে শত শত ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে একের পর এক ফিশিং ট্রলার। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় বা ঝঁড়িতে করে মোকামে তোলা হচ্ছে নানা সাইজের ইলিশ।

এক পোটলা মাছ উঠে এলেই ব্যবসায়ীদের হাক-ডাক, আগে দখল করতে হুড়ু-হুড়ি। ফলে সরগরম হয়ে উঠেছে ফিশারি ঘাট তথা কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। কম-বেশি দামে বেচা-বিক্রি হওয়ায় কাজের লোকদেও যেন দম ফেলার জোঁ নেই। কেউ বরফ ভাঙ্গছে, কেউবা ইলিশ বিন্নাস করে বরফজাত করে রপ্তানির জন্য তৈরী করছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিতে অনেক আড়তদার ইলিশ বুঝাই ট্রাক সারি করে রেখেছেন। রাতে তা রওয়ানা হবে।

তবে, স্থানীয়দের মতে- মাছ বেশি এলেও দাম চড়া। স্থানীয় মধ্যবিত্ত বা গরীব লোকজনের নাগালের বাইরে রয়েছে। তবে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যবসায়ী, জেলে ও ট্রলার মালিকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

মৎস্য ব্যবাসায়ী নেতা জয়নাল আবেদীন হাজারি বলেন, অনেক দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এ সেক্টরের সাথে থাকা মানুষগুলোর কষ্টে দিন গেছে। তার উপর করোনার দুর্যোগ চলছে। এখন আল্লাহর রহমতে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে। এধারা অব্যহত থাকলে মৎস্য সংশ্লিষ্টদের কষ্ট ঘুচবে বলে আশা করছি।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জানে আলম পুতুর মতে, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে মৎস্য সংশ্লিষ্টরা ধার দেনায় চলেছে। মাছ বেশি পাওয়া অব্যহত থাকলে দেনা শোধ করে ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে ব্যবসায়ী ও ফিশিং ট্রলার মালিকেরা।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ম্যানেজার মো. এহসানুল হক বলেন, মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দীর্ঘদিন পর প্রাণচাঞ্চল্য পেয়েছে। ফিরে আসা ট্রলারগুলো কাঙ্খিত মাছ পাচ্ছে। এতে মাছের পরিমাণ ও রাজস্ব উভয়ই বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বাংলাধারা বলেন, গত বছর জেলায় ইলিশ আহরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ২৫৬ মেট্রিক টন। এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার মেট্রিক টন। গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধ ছিল। এ কারণে ইলিশের প্রজনন ও আকৃতি বেড়েছে অনেকগুণ। দুর্যোগকাল কাটিয়ে জেলেরা সাগরে নামছেন। আশা করছি এবারও ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবেন জেলেরা।