কক্সবাজার ক্যাম্পে কোভিড-১৯ টিকাকর্মসূচীতে রেড ক্রিসেন্টের সহায়তা

কক্সবাজার॥ কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আগত নাগরিকদের জন্য কোভিড-১৯ এর টিকাপ্রদান কর্মসূচিতে সহায়তা করছে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (বিডিআরসিএস)। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) শুরু হওয়া এই কর্মসূচিতে ৩৪ টি ক্যাম্পে রেড ক্রিসেন্টের প্রায় ১00 প্রশিক্ষিত কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবক ইউএনএইচসিআর ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে একযোগে কাজ করছেন।

প্রাথমিকভাবে, পঞ্চান্ন ও তদোর্ধ বয়সী ৪৮,০০০ ক্যাম্পবাসী এই কর্মসূচীর আওতায় আসবেন। অতিরিক্ত ঘনবসতি বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসকারী প্রায় নয় লক্ষ মানুষকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের বড় ঝুঁকিতে ফেলেছে। এছাড়াও সীমিত স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ পানির স্বল্পতাসহ এদের মধ্যে অনেকেরই পূর্বে থেকে বিদ্যমান স্বাস্থ্য জটিলতা রয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে নতুন করে আসা অতিরিক্ত মানুষ কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের আগে থেকেই কক্সবাজারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে যা এখন আরও জটিল আকার ধারণ করছে।

 

করোনা মোকাবেলায় সারা দেশের মতো কক্সবাজারেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিস (আইএফআরসি) এর সহায়তায় পপুলেশন ‍মুভমেন্ট অপারেশন (পিএমও), ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় মিয়ানমার রিফিউজি রিলিফ অপারেশন (এমআরআরও) এবং কক্সবাজার জেলা ইউনিটের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে চলছে এসব কার্যক্রম। ডেলটা ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের মধ্যেও কক্সবাজারে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ এবং এই ভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ২০০ জন। এই জেলায় সংক্রমণের হার প্রায় ২০ শতাংশ। ক্যাম্পগুলোতে এখন পর্যন্ত প্রায় ২,৫০০ এর অধিক মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন প্রায় ২৫ জন।

 

জনাব এম এ হালিম, হেড অব অপারেশন, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, কক্সবাজার এ প্রসঙ্গে বলেন, “করোনার সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে অন্যান্য জায়গার মতো কক্সবাজারের সকল নাগরিকদেরকে টিকা কার্যক্রমের আওতায় আনার বিকল্প নেই। এতে বহুমানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে। এই মহামারি বন্যা, ভূমিধ্বস এবং আগুনসহ বহুমাত্রিক সংকটে জর্জরিত ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জীবনকে আরও জটিল করে তুলেছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্টের লক্ষাধিক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকরা সরকারের টিকাদানকর্মসূচিকে সফল করতে দেশব্যাপী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজার ও ক্যাম্পগুলোতেও আমাদের সহকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা টিকাকার্যক্রমে সহায়তা করছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পের মানুষকে টিকা নিতে আগ্রহী করে তোলার জন্য বাড়িতে-বাড়িতে গিয়ে টিকাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য প্রচারে রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন।”

 

“টিকা বণ্টণে বৈশ্বিক বিভাজনের কারণে কোভিড-১৯ সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মানুষরা টিকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্যাম্পসহ উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কক্সবাজারের সকল পূর্ণবয়স্কদের সবাইকে দ্রুত টিকাপ্রদান কর্মসূচির আওতায় আনতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”বলেন ঋষিকেশ হরিচন্দণ, আইএফআরসি’র কক্সবাজারস্থ অফিসের প্রধান। “করোনার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে ঘরের ভিতরে থাকাটা ভীষণ কঠিন। এই জনগোষ্ঠীর জন্য একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে হলে এদের টিকার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অত্যন্ত সীমিত জায়গার মধ্যে গাদাগাদি করে থাকা এবং খাবার পানি, খাদ্য ও পয়নিষ্কাশনের সংকট ক্যাম্পের বসবাসকারীদের করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকিকে অনেক বাড়িয়ে তুলেছে।”

 

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৩ শতাংশের কম মানুষ সম্পূর্ণভাবে কোভিড-১৯ টিকা সুবিধার আওতায় এসেছেন এবং রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবকরা সরকারের এসব কর্মসূচিতে শুরু থেকেই সহযোগিতা করছে। দেশে চলমান গণ টিকা কর্মসূচিতেও সহায়তা করছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। ক্রমবর্ধিত সংক্রমণ মোকাবেলায় কক্সবাজারে রেড ক্রিসেন্ট এখন পর্যন্ত দুইটি আইসোলেশন ও ট্রিটমেন্ট সেন্টার তৈরী করেছে, যার মধ্যে এখন একটি চালু রয়েছে। ক্যাম্পের প্রায় ৯ লক্ষ মিলিয়ে কক্সবাজারের এই স্থানে প্রায় দশ লক্ষ চব্বিশ হাজার মানুষ বসবাস করেন। এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা করোনা মহামারির আগে থেকেই বাড়তি চাপের মধ্যে ছিলো। সম্মিলিত মানবিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আইএফআরসি, অন্যান্য রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্টের সহায়তায়, রেড ক্রিসেন্ট কক্সবাজারে ইতোমধ্যে ছোটো-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৪ টি স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রতিদিন এসব কেন্দ্র থেকে স্থানীয় ও ক্যাম্পের অসংখ্য মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকেন।