তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনলাইন টেলিভিশন (আইপিটিভি) বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আইপিটিভির কোনো লাইসেন্স তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়নি। বিটিআরসি থেকেও সেভাবে কোনো লাইসেন্স দেওয়া হয় না। এ কারণে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছি।
শনিবার (৩০ মার্চ) শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার কন্সফারেন্স হলে সম্প্রচার সাংবাদিক কেন্দ্র আয়োজিত ‘সংকটে বেসরকারি টেলিভিশন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আইপিটিভিও একটি নীতিমালার মধ্যে থাকার দরকার। কেন না কেউ ৫০ কোটি বা ১০০ কোটি টাকা দিয়ে টেলিভিশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করবে আর কেউ মাত্র ১০ লাখ টাকা দিয়ে তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে। হ্যাঁ, ১০ লাখ টাকা খরচ করে করতে পারলে অসুবিধা নেই। তবে সেটা নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। সরকার এক টাকা রেভিনিউ পাবে না, তার পক্ষপাতী আমি না।’
সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে দেশীয় চ্যানেল ও শিল্পকে সুরক্ষা দিতে কাজ করছি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যা এরইমধ্যে অন্যান্য দেশে হয়েছে। এ কারণে এটিকেও একটা নিয়মনীতির মধ্যে আনার জন্য কমিটি গঠন করেছি। যদিও এটি এত সহজ কাজ নয়, এখানে নানাপক্ষের স্বার্থ যুক্ত।’
টেলিভিশনকে শিল্প আখ্যায়িত করে মন্ত্রী বলেন, ‘এ শিল্পকে রক্ষায় সবাই মিলে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।’ এ সময় তিনি জনমনে বা নতুন প্রজন্মের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে এমন কন্টেন্ট তৈরি এবং তা না দেখানোর জন্য টেলিভিশন চ্যানেলগুলোকে অনুরোধ জানান।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর জন্য বড় সমস্যা হলো- চ্যানেল বেড়েছে কিন্তু বিজ্ঞাপনের বাজার ছোট হয়েছে। একই সঙ্গে টেলিভিশনগুলো বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য নিজেরা প্রতিযোগিতা করে বিজ্ঞাপনের রেট কমিয়ে দিয়েছে। এছাড়া বর্তমান সময়ে অনলাইনে অনেক বিজ্ঞাপন চলে গেছে। এই সমস্ত কিছুর কারণে টেলিভিশনগুলোতে সংকট তৈরি হচ্ছে। এ সংকট সমাধানে আমি মনে করি একটি বড় ভূমিকা রয়েছে কেবল অপারেটরদের। কারণ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেখানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এটি না দেখানোর শর্তেই কেবল অপারেটররা লাইসেন্স নিয়েছেন। এখন যদি কেউ দেখায় সেটি দণ্ডণীয়।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে আমরা এরইমধ্যেই দুই দফা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আগামী ১ এপ্রিল থেকে আইন প্রয়োগ করা হবে। আজও আবার বলছি, আগামীকাল আবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এরপর ১ এপ্রিল থেকে আইন প্রয়োগ করা হবে। আমি আশা করবো এ শিল্পকে বাঁচানোর স্বার্থে কেবল অপারেটরা সহযোগিতা করবেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে ৩ কোটি গ্রাহক থেকে বিপুল একটা রেভিনিউ আসে। এ রেভিনিউ শেয়ারের একটা আলোচনা এখানে এসেছে। আমি আশা করবো কেবল অপারেটদের নিয়ে আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটা প্রস্তাব দিলে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করবো। এতে সরকারের কোনো অসুবিধা নেই।’ টেলিভিশনগুলো টিকে থাকার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সারাবাংলা ডটনেট, দৈনিক সারাবাংলা (প্রকাশিতব্য) ও জিটিভির এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। সংগঠনের চেয়ারম্যান রেজওয়ানুল হক রাজার সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন- প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার গোলাম রহমান, শ্রম আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, বেঙ্গল গ্রুপ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আসফার খায়ের প্রমুখ।