লকডাউনে আম বিক্রি করতে না পারায় মধুর স্বপ্নভঙ্গ
মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই। লকডাউনে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে। গাছের আম গাছেই পঁচে নষ্ট হচ্ছে। কি করে ঋণ পরিশোধ করব বুঝতে পারছিনা। অনেকদুঃখে উপরোক্ত কথাগুলো বলছেন কৃষক মধু মঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা। তিনি পেশায় একজন আদর্শ শিক্ষক। কাপ্তাই ব্যাপ্টিস্ট মিশন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে ২০১১ সালে দুর্গম রাঙামাটি সদরস্থ জীবতলী এলাকায় ১০ একর জমিতে গড়ে তোলেন দেশের নামীদামী বিভিন্ন প্রজাতির একটি আম বাগান। ওই বাগানে প্রায় ৮শ’ আমগাছ রয়েছে।
কৃষক মধুমঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এবাগানটি করতে ব্যাংক ঋণ, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে কর্জ করে প্রায় দশ লাখ টাকা ব্যয়ে বাগানটি করেছেন। রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে নামিদামি ১০ প্রজাতির আমের চারা সংগ্রহ করে রোপন করেন বাগানে। বারি-১,২,৩,৪,৭,৮,১১, হাড়িভাঙ্গা, মল্লিকা, আম্রপালি। নিজেসহ ৭ জন শ্রমিক নিয়ে প্রতিদিন বাগান পরিচর্যা করেছেন। দিনমজুরদের পরিশ্রমিক খানাদানা বাবদ মাথাপিছু প্রতিদিন ৪-৫শ’ টাকা দিতে হয়েছে। চলতি মৌসুমে বাগানে প্রচুর আমও ধরেছে। দেখে অনেক খুশি হয়েছিলাম। আশা করেছিলাম এবার আম বিক্রি করে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা আয় করতে পারব। ইতিমধ্যে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার আম বিক্রিও করেছি। কিন্তু মহামারী করোনার কারণে দফায় দফায় লকডাউনের ফলে পরিবহন বন্ধ থাকায় আম বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। ব্যবসায়ীরা আর আম ক্রয় করতে আসছেনা। গাছের আম ফেঁটে গাছেই পঁচে নষ্ট হচ্ছে।বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, সারিসারি আম গাছে থোকায় থোকায় আম ভরপুর হয়ে রয়েছে। বেশির ভাগ আম পঁচে নষ্ট হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। এব্যাপারে বাগান মালিক কৃষক মধুমঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যার নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, শখ করে অনেক টাকা-পয়সা লোন নিয়ে বাগান করেছিলাম। লকডাউনে তার সকল স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল। যে পরিমানে আম বিক্রয়ের কথা ছিল, তা আর বিক্রি করতে পারিনি। অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে তার। এখন ব্যাংক ঋণ আর আত্মীয়-স্বজন থেকে নেয়া কর্জের টাকা কি করে পরিশোধ করব। লকডাউন দেওয়ার ফলে সকল পরিবহন ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত বন্ধ থাকায় ব্যবসায় ধস নেমে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েগেছে। সহপাঠীর বাগান থেকে আম নিতে আসা শিক্ষক মোঃ ইসমাইল হোসেন ও মোঃ নাজমুল জানান, মধুমঙ্গল তঞ্চঙ্গ্যা একজন সফল শিক্ষক ও সখের কৃষক। সে স্কুল শেষে বাগান নিয়ে পড়ে থাকে। লকডাউনের ফলে তার গাছের অনেক নামিদামি আম বিক্রি করতে না পারায় তার বড়ধরনের ক্ষতি হয়েছে। মধুমঙ্গল জানান, বর্তমানে আর কিছুই করার নেই, বাগানে আম পঁচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার চেয়ে শুভাকাঙ্খী ও বন্ধু বান্ধবের মাঝে আম বিতরণ করছি। তারা খেয়ে দোয়া করবে যেন আগামিতে বাগান আরও উন্নত করতে পারি।