অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাকালে শিক্ষাকার্যক্রম এগিয়ে নিতে দেশে অনলাইনে পরীক্ষা শুরু করেছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)। ইতিমধ্যে প্রতি সেমিস্টারে ৩টি করে ৩৫টি পরীক্ষা শেষ হয়েছে।

শতভাগ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেই নেওয়া হচ্ছে এ পরীক্ষা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যায়গুলো অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করলেও প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সিভাসুতে গত ১৫ জুন থেকে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম। যা এখনো চলমান। এ অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষাকার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরাও। এ েছাড়াও অনলাইন পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গরিব শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন কিনতে শিক্ষার্থীদের ১০ হাজার টাকা করে ঋণ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৩০ জুন) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২০১ নম্বর কোর্সের জেনারেল প্যাথলজি ও বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১০১ নম্বর কোর্সের গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনজন শিক্ষক ও চারজন কর্মকর্তা অনলাইনে পরীক্ষা তদারকি করছেন। এছাড়াও সম্পূর্ণ বিষয়টি উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ নিজেই মনিটরিং করছেন।

পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত সময়ের আগেই উপস্থিত হয়ে অনলাইনে যুক্ত হতে হয়। এ সময় শিক্ষকরা গুগল ক্লাস রুমে পিডিএফ ফাইলের একটি প্রশ্ন আপলোড করেন। ১০ মিনিটের মধ্যে হাতে পাওয়া প্রশ্ন লিখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্রে লেখা শুরু করেন। জুম অ্যাপের সহযোগিতায় কয়েকটি ল্যাপটপের সমন্বয়ে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়টি নগরদারি করেন শিক্ষকরা। কেউ যদি কোনো কারণে জুম থেকে বের হয়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষার্থী ডিসকোয়ালিফাই হয়ে যান। এর পর তিনি আর পরীক্ষায় যুক্ত হতে পারেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানায়, বিভিন্ন বর্ষে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণ শুরু হয়েছে গত ১৫ জুন থেকে। সেদিন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের একটি কোর্সের অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অংশ নিয়েছিলেন ওই বর্ষের ৫৭ শিক্ষার্থী। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৬০টি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে আরও ১৬৩টি পরীক্ষা হবে। শুরুতে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও ধীরে ধীরে এ পদ্ধতিতে খাপ খাইয়ে নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

ইউজিসির নির্দেশনা পেয়ে গত বছরের জুন থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর একটি সেমিস্টার শেষে পরের সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনে সম্পন্ন হয়। কিন্তু কোনোভাবেই পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে গত মে মাসে শিক্ষকদের নিয়ে বৈঠক করেন উপাচার্য। সিদ্ধান্ত হয় অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার। শুরুতে অনেক শিক্ষক রাজি না হলেও পরবর্তীতে উপাচার্যের প্রেরণায় রাজি হন তারা।

তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের একাধিকবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া শিক্ষকদের ১৮ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সিভাসু উপাচার্য ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা তথ্যপ্রযুক্তির এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা শিক্ষার্থীদের সেশনজট নিরসনে অনলাইন পরীক্ষা শুরু করেছি।

তিনি বলেন, গত বছরের জুনে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছিল। এক সেমিস্টারের পর অন্য সেমিস্টারের ক্লাস সম্পন্ন হলেও কোনোভাবে পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছিল না। গত ডিসেম্বরে আমরা কয়েকটা পরীক্ষা অনলাইনে নিয়েছি। কিন্তু এরপর সরকার আবারও সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করেন। এদিকে করোনা পরিস্থিতিও দিন থেকে দিন খারাপ হতে থাকে। এ অবস্থায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা করে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

উপাচার্য বলেন, দেশের সব জায়গায় কোনো না কোনো অপারেটরের নেটওয়ার্ক ভালো থাকে। কিছু শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোন সমস্যা ছিল। আমাদের কাছে ৪৫ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। আমরা সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঋণ দিয়েছি। যদিও ইউজিসি থেকে আমরা স্মার্টফোনের জন্য কোনো বরাদ্দ পাইনি।