টেকনাফে বৈরী আবহাওয়া ও টানা বৃষ্টির পর ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন লবণ চাষিরা। ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবন উৎপদনের লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে উপজেলার পাঁচ ইউপিতে তিন হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে পুরোদমে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত চাষিরা।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) টেকনাফ লবণ কেন্দ্রের ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, চলতি ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে জেলায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেয়া হয়েছে। এখন লবণ উৎপাদনের ভরা মৌসুম। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে লবণের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। লবণের ন্যায্য মূল্য পেতে চাষিরা লবণ মাঠে কোমর বেঁধে নেমেছে।
টেকনাফ সদর, হোয়াইক্যং, হ্নীলা, বাহারছড়া, সাবরাং ও শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর উপকূলে তিন হাজার ১৮০ হেক্টর লবণ মাঠে চলছে উৎপাদন। বিশেষ করে শাহপরীর দ্বীপে বেড়িবাঁধ নিমার্ণের পর চাষিরা নির্বিঘ্নে চাষাবাদ করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, গত বছর লবণ উৎপাদন হয়েছে ৭৪ হাজার মেট্রিক টন। এবার লবণ মৌসুম শুরু হওয়ার পর তিন দফা আবহাওয়া বিগড়ে যায়। মার্চের প্রথম সপ্তাহে মাঝারি এবং ভারী বৃষ্টি হয়। এতে লবণ মাঠের প্রায় পাঁচ হাজার মেট্রিক টন লবণ বৃষ্টির পানিতে ভেসে যায়। বৃষ্টির পর এখন পুরো দমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
টেকনাফের নাফনদী ও সাগর উপকূলীয় এলাকায় লবণ উৎপাদিত হচ্ছে। জাতীয় ভাবে লবণের চাহিদা মেটাচ্ছে এসব উপকূলীয় এলাকা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে লবণ আমদানি না হলে লবণ চাষিরা ন্যায্য মূল্য পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চাষিরা। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, শত শত একর লবণ মাঠে চাষিরা অবিরাম পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। উৎপাদিত লবণের স্তূপ মাঠে পড়ে আছে।
লবণ ব্যবসায়ী ও চাষি ফরিদ আলম বলেন, চলতি বছর পানির ধরে বিক্রি হচ্ছে লবণ। মৌসুমের প্রথম পর্যায়ে ৩০০ টাকা আর বর্তমান তিন মাস শেষ হতে চললেও ২৫০ টাকা লবণ বিক্রি হচ্ছে। যার কারণে চাষিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সঠিক মূল্য না পেলে চাষিদের বড় ধরণের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
লবণ চাষি মো. আব্দুর রহমান বলেন, ‘গত তিন বছর ধরে তিন শ কানি জমি আবাদ করে লবণ চাষাবাদ করে আসছি। এমন কি লবণ শিল্পকে বাঁচাতে নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণ করে লবণ উৎপাদন করছি। এতে বেশ সাফল্য অর্জন হচ্ছে। তিন বছরে লবণ উৎপাদনে সাফল্য আশাতীত। সম্পূর্ণ পলিথিন পদ্ধতিতে শতাধিক শ্রমিক এতে নিয়োজিত রয়েছে।
এছাড়া শুকনো মৌসুমে ছয় মাসে লবণ এবং বর্ষা মৌসুমে ছয় মাস চিংড়ি চাষ করে আর্থিকভাবে সাফল্য অর্জন করি। বৈধ ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে বেঁচে থাকতে চাই। জমি উর্বরতার কারণে প্রতি কানিতে চার শ মণ লবণ উৎপাদিত হচ্ছে’।
লবণ ব্যবসায়ী মো. শরীফ বলেন, চাষিরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লবণ উৎপাদন করলেও ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান প্রতি মণ লবণ বাজার মূল্য ২৭০ টাকা। ঢাকার পরিবহন ভাড়া ৪০ হাজার টাকা ও চট্টগ্রামে ২০ হাজার টাকা। এছাড়া পরিবহনে ১২ মেট্রিক টন ঊর্ধ্বে লবণ পরিবহন করতে পারে না। ২৪ মেট্রিক টন পণ্য বোঝাই করে বিভিন্ন পরিবহন ট্রাক টেকনাফে আসতে পারলেও এক্ষেত্রে লবণ নিতে পারে না। লবন পরিবহনে ট্রাক প্রতি ১২ টনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে হচ্ছে। এতে লবণের মালিক ও ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।