টিকা গ্রহীতাদের উপস্থিতি বেড়েছে

সারা দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি চলছে। টিকায় আগ্রহ বাড়ছে। করোনাভাইরাসের গণটিকাদানের দ্বিতীয় দিনে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে টিকা গ্রহীতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। মানুষ কেন্দ্রে আসছেন। টিকা নিচ্ছেন। তাদের ভয় কাটছে। বৃদ্ধি পেয়েছে নিবন্ধনের সংখ্যাও। অনেক প্রবীণ স্বজনদের সঙ্গে এসে টিকা নিয়ে বলেছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে এখন নিরাপদ বোধ করছেন তারা।
দ্বিতীয় দিন টিকা নিয়েছেন ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। আগের দিনের তুলনায় সারা দেশে টিকাগ্রহণকারীর সংখ্যা ১৫ হাজার ৩৪৯ বেড়েছে। প্রথমদিন টিকা নিয়েছিলেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। গতকাল পুরুষ টিকা নিয়েছেন ৩৫ হাজার ৮৪৩ জন। নারী ১০ হাজার ৬৬৬ জন। ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ৭ হাজার ১৭৮ জন। আগের তুলনায় টিকা নেয়ার সংখ্যা ঢাকা মহানগরে বেড়েছে ২ হাজার ১০৭ জন। দুইদিনে দেশে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন মোট ৭৭ হাজার ৬৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৯ হাজার ৭০০ এবং নারী ১৭ হাজার ৯৬৯ জন। গতকাল টিকা নেয়ার পর ৭১ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, টিকা নেয়ার স্থানে লাল হওয়া ইত্যাদি খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দুই দিনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে মোট ৯২ জনের। গতকাল বিকাল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৫ লাখ ১২ হাজার ৫ জন টিকা নিতে আগ্রহী অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। আর প্রতিদিনই বাড়ছে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা।

দ্বিতীয় দিন সোমবার সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকা দেয়া হয়। করোনাভাইরাস মোকাবিলার সম্মুখযোদ্ধাদের সঙ্গে বয়সে প্রবীণ ও মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকটি শ্রেণির নাগরিকরা প্রথমদিকে টিকা পাচ্ছেন। রাজধানীর হাসপাতাল ও টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই মানুষকে টিকা নিতে দেখা গেছে।
গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নিয়েছেন। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে টিকা নিয়েছেন অনেক সাধারণ মানুষও। টিকা দেয়াকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। টিকা নেয়ার আগে ভয় কাজ করলেও টিকা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন অনেকে।

গতকাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে আটটি বুথ থেকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া হয়। নারীদের জন্য রাখা হয় আলাদা বুথ। সবাই সুশৃঙ্খলভাবে টিকা নিচ্ছে। অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি, ডায়াবেটিস রোগী টিকা নেয়ায় মানুষের মাঝে ভয় ও জড়তা কেটে গেছে। প্রতি বুথে ১৫০ জন করে আটটি বুথে ১২০০ জনকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি আছে। রেজিস্ট্রেশনের জন্য আলাদা বুথ আছে। স্বেচ্ছাসেবকরা শৃঙ্খলা বজায় রাখছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর বিশ্রামের ব্যবস্থা আছে। গতকাল এই কেন্দ্রে ৮৯৮ জন টিকা নিয়েছেন। আগের দিন ছিল এই সংখ্যা ৫৬০ জন।

মহাখালীরই আরেক সরকারি হাসপাতাল শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পাঁচটি বুথে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ৮২ জন টিকা নেন। এখান থেকে টিকা নিতে মোবাইলে বার্তা পাঠানো হয়েছিল ১২৬ জনকে।
এদিকে, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে করোনার টিকা নেয়ার সংখ্যা বেড়েছে। কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিন টিকা নিয়েছেন ২৫৭ জন। বিকালে সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ৭ই ফেব্রুয়ারি মোট ১৬৭ জন টিকা নিয়েছেন। আর আজকে (গতকাল) নিয়েছেন ২৫৭ জন। আমরা সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ টিকা দেয়ার কার্যক্রম চালিয়েছি। সচিবালয় ক্লিনিকে মোট ১২ দিন এ কার্যক্রম চলবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টিকা নেয়ার পর ১০ থেকে ২০ মিনিট বিশ্রাম নিয়ে ফের কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছেন। তবে কারও কোনো সমস্যার খবর পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস’র পরিচালক অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত গতকালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ঢাকা মহানগর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে টিকা নিয়েছেন ৫ হাজার ৬৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২ হাজার ৩৯৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ হাজার ৪৮০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ হাজার ৬৪২ জন, রংপুর বিভাগে ৫ হাজার ৫০৩ জন, খুলনা বিভাগে ৪ হাজার ১৭০ জন, বরিশাল বিভাগে ১ হাজার ৫৪৪ জন এবং সিলেট বিভাগে টিকা নিয়েছেন ৩ হাজার ৯৫৪ জন। ৭১ জনের সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন জ্বর, টিকা নেয়ার স্থানে লাল হওয়া ইত্যাদি খবর দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত দু’দিনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ বা অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন (এইএফআই) রিপোর্ট করেছেন ৯২ জন।

এবার চল্লিশোর্ধদের ভ্যাকসিনের সুযোগ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তিদের করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের অনুমতি দেয়া হবে। গতকাল তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূরকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগে, অগ্রাধিকারভিত্তিতে সামনের সারির কর্মী ও ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।

গত ২৭শে জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর রোববার শুরু হয়েছে দেশব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি। দিনের শুরুতেই রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে টিকা নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এরপর অগ্রাধিকারভিত্তিতে নিবন্ধনকারীরা টিকা নেন। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে টিকা নিচ্ছেন সরকার ও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। সারা দেশের মোট ১ হাজার ৫টি হাসপাতালে চলছে এই কর্মসূচি। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নেয়ার পর অন্যরা পর্যায়ক্রমে টিকা পাবেন। তবে প্রথম ধাপে ১৮ ক্যাটাগরির মানুষ টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে। সবাইকে এ টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে। এই টিকার তিন কোটি ডোজ পেতে সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের, যার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ হাতে পাওয়ার পর জেলায় জেলায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে আগেই। এ ছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে আরো ২০ লাখ ডোজ টিকা। এই টিকা নিরাপদ এবং করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।