বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে সাঙ্গু নদীর তীরে বিক্ষোভ

অত্যাধুনিক ড্রেজিং মেশিনে বিআইডব্লিউএ কর্তৃক অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্তৃক অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন অত্যধুনিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অনুমোদনহীন অবৈধভাবে শঙ্খ নদ (সাঙ্গু নদী) থেকে বালু উত্তোলনের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর উদ্যোগে এক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আজ শুক্রবার সকালে ১০ঘটিকার সময় জনপদ, নদীরক্ষা বাঁধ, জনবসতি ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ধ্বংসের পাঁয়তারা করার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী ব্রীজ সংলগ্ন র্পূবকাটগড়-কালিয়াইশস্থ সাঙ্গু নদীর তীরে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পরিবেশ, কৃষক ও রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ, নদীভাঙ্গন কবলিত শত শত এলাকাবাসী এবং শঙ্খ চরের অগণিত কৃষক অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, বিআইডব্লিউটিএ কোনো ধরনের অনুমোদন ব্যতিরেকে এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আপত্তি সত্ত্বেও অযাচিত-বেআইনিভাবে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে স্থানীয় কিছু বালুদস্যু এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের সহযোগিতায় আমাদের ভিটামাটি, কৃষি জমি, নদীরক্ষণ বাঁধ ধ্বংস করে আমাদেরকে উদ্বাস্তু করার চক্রান্ত শুরু করেছে। সমাবেশে জানানো হয়, সাঙ্গু নদীর ড্রেজিং প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় কর্তৃক ১৭০২নং স্মারকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবর একটি চিঠি/নোটিশ ইস্যু করা হয়। এই নোটিশটি তত্ত¦াবধায়ক প্রকৌশলী, বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক ১৭/০১/২০২১ ইংরেজিতে (নথি নং- ১৮.১১.০০০০.৩১৪.০৭. ০৮৫.২০.২১১৩) ড্রেজিং করার আবেদনের প্রেক্ষিতে জারি করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, “সাঙ্গু নদীর গতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী বিশদ পরিকল্পনা না করে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু স্থানে ড্রেজিং করা হলে নদীর মরফোলজিকাল পরিবর্তন হয়ে ভাঙ্গনের পরিমাণ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।…এছাড়া সাঙ্গু নদীর অববাহিকায় ডিটেইল ফিজিবিলিটি স্টাডি ব্যতীত ও অপরিকল্পিতভাবে নদী হতে বালি উত্তোলন করা সমীচিন হবে না মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে”। সাঙ্গু নদীর ড্রেজিং প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, “বিআইডব্লিউটিএর পত্রে নদীর ড্রেজিং কাজে কোন নকশা কিংবা কত র্দৈঘ্য ড্রেজিং করা হবে তার কোন বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ নেই। শুধুমাত্র কিছু স্থানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে সাঙ্গু নদীর মত খর¯্রােতা বা ভাঙ্গন প্রবণ নদীতে কোন নকশা অনুসরণ ব্যতিরেখে ড্রেজিং করা হলে ব্যাপক নদীভাঙ্গনের ঝুঁকি থেকে যায় এবং দোহাজারী ব্রীজ ও নির্মাণাধীন রেল ব্রীজও ঝুঁিকর মধ্যে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে সড়ক বিভাগ এবং চট্টগ্রাম জেলা পানি সম্পদ ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কমিটির মতামত গ্রহণ করার আবশ্যকতা রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হচ্ছে। যেহেতু বর্ণিত কাজে সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সেহেতু বিষয়াটির সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ এবং আন্ত:মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে”। সুতরাং, উপর্যুক্ত বিষয়াবলি বিবেচনায় রেখে দ্রুত ড্রেজার মেশিন সরিয়ে নিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ সমাবেশে দাবি জানান এবং ভবিষ্যতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করা হলে এর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা দেন এলাকাবাসী। সংযুক্তি: প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের স্থিরচিত্র