এক কেজি চিনির উৎপাদন খরচ ২৮০ টাকা

দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকলে বিক্রয়মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় চলতি মৌসুমে আখ মাড়াই স্থগিত করা হয়েছে। প্রতি কেজি চিনির সর্বোচ্চ মূল্য ৬০ টাকা হলেও চিনিকলটিতে এক কেজি চিনি উৎপাদনে ২৮০ টাকা খরচ পড়ে।

এতে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। নভেম্বর পর্যন্ত চিনিকলটিতে লোকসানের পরিমাণ ৫২০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ দুরবস্থার কারণে চলতি মৌসুমে চিনিকলটিতে আখ মাড়াই স্থগিত রেখেছে খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশন।

রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম জাকির হোসেন জানান, গত বছর ৪০ হাজার টন আখ মাড়াই করে ২ হাজার ৪৫৯ টন চিনি উৎপাদন করা হয়েছে। একই বছর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের বেতন বাবদ প্রায় ২০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আখের দাম বাবদ ১৪ কোটি টাকারও বেশি এবং ১৮০ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণের সুদ দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি চিনির উৎপাদন খরচ ২৮০ টাকা পড়েছে।

দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল

অথচ মিলগেটে প্রতি কেজি চিনির বিক্রয়মূল্য ৬০ টাকা। তিনি বলেন, বিক্রয়মূল্যের চেয়ে উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে সেতাবগঞ্জ চিনিকলে ৪৫ হাজার টন আখ মাড়াইয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২৫ ডিসেম্বর আখ মাড়াই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আখ ঠাকুরগাঁও চিনিকলে পাঠাতে হবে।

সূত্র জানায়, উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় চিনিকল সেতাবগঞ্জ চিনিকলে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক মিলিয়ে ৯২৩ জন কর্মরত। তাদের মধ্যে মৌসুমি শ্রমিক ৩০১ জন এবং চুক্তিভিত্তিক ২৪৯ জন।

প্রতিমাসে তাদের বেতন বাবদ ১ কোটি ১৭ লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হয়। লোকসানের বোঝা অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় চলতি ডিসেম্বরসহ ছয় মাসের বেতন বকেয়া পড়েছে। গত বছর এ চিনিকলে ২ হাজার ৪৫৯ টন চিনি উৎপাদিত হলেও ২০৬.৭৫ টন চিনি অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। ময়লা গুড় ১ হাজার ৮০১ টন মজুদ আছে।

সূত্র জানায়, দুরবস্থার কারণে চলতি মৌসুমে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের আখ মাড়াই স্থগিত রেখেছে খাদ্য ও চিনি শিল্প কর্পোরেশন। এছাড়া এবার পাবনা, কুষ্টিয়া, পঞ্চগড়, শ্যামপুর ও রংপুর চিনিকলেও আখ মাড়াই স্থগিত রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৩৩ সালে বেসরকারি উদ্যোগে চিনিকলটি স্থাপিত হয়। ১৯৭২ সালে এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চলে যায় এবং ১৯৭৪ সালে মিলটি লে-অফ ঘোষণা করা হয়। তবে ১৯৮২ সালে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ চিনিকলটি নতুন আঙ্গিকে আবার চালু হয়। চিনিকলটির নিজস্ব জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৮৬০ একর।