খুটাখালীতে চিংড়ি ঘের ও লবণের মাঠ হুমকির মুখে!

ঈদগাঁও প্রতিনিধি: অবৈধভাবে চিংড়ি ঘের ও লবণ মাঠ তৈরি করার জন্য স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্যারাবনের হাজার হাজার গাছ নিধন করায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী উপকূলের লবণ মাঠ-চিংড়ি ঘেরসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলর প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছিল ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকা বহলতলী, চিলখালী, টকটকি ঘোনা ও ফুলছড়ি। ২৮ বছর আগের সেই ক্ষতি এখনো পুষিয়ে উঠতে পারেননি ভুক্তভোগী মানুষ। সংস্কার হয়নি বেড়িবাঁধ। সৃজিত হয়নি প্যারাবন। যা আছে তারও দৈন্য দশা চলছে এখন। উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় ৯১ সালের পরে উপকূলের বেড়িবাঁধ ও চর এলাকায় ব্যাপকভাবে প্যারাবন সৃজনের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে যেসব এলাকায় প্যারাবন সৃজন হয়েছে তার বেশির ভাগই আবার উজাড় হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত প্যারাবন নিধন চলছেই। বন বিভাগ প্যারাবন সৃজনের নামে এ সময়ের মধ্যে কোটি টাকা লোপাট করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্যারাবন নিধন করে চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ তৈরি করছেন। বিগত ক’বছর ধরে খুটাখালী উপকূলীয় এলাকায় অন্তত হাজার একর প্যারাবন অবৈধ দখলে চলে গেছে। তবে উপকূল রক্ষায় নামে মাত্র প্যারাবন সৃজন করলেও প্যারাবন রক্ষায় কোন পদক্ষেপ নেয়নি বন বিভাগ। পাশাপাশি প্রভাবশালী মহল প্যারাবন নিধন করে প্রায় ২শ একর চিংড়িঘের তৈরি করে। এমনতর ঘটনায় প্রভাবশালী নেতাদের চাপের মুখে থানা পুলিশ মামলাও নেয়নি।
খুটাখালীর উপকুলের বাসিন্দারা জানায়, বিগত ৯১ সালে যেখানে প্যারাবন ছিল, সেখানে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে যে প্যারাবনগুলো ধ্বংস হয়েছিল তাও সৃজন করা হয়নি। বহলতলী, চিলখালী, মেদার মুখে প্যারাবন উজাড় করে অবৈধভাবে চিংড়িঘের ও লবন মাঠ তৈরি করছে প্রভাবশালীরা। এতে উপকূলের নিরাপত্তার ছায়া হিসাবে খ্যাত প্যারাবন নিধনে বেড়িবাঁধের প্রায় ৭ কিলোমিটার হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে গতকাল রবিবার গিয়ে দেখা গেছে, ইউনিয়নের উপকূলীয় এসব এলাকায় প্যারাবন বলতে আছে শুধু গাছের গোড়ালি, নেই কোনো গাছ। স্থানীয় লোকজন গাছের গোড়া গুলোও তুলে নিচ্ছে। দিনরাত প্যারা কেটে নৌকা ভর্তি করে মজুদ করছে লাল গোলা ব্রীজ এলাকায়। সেখানে থেকে ট্রাক ডাম্পার যোগে বিভিন্ন ইটভাটায় পাচার করছে বনখেকুরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র মিলে উপকূলীয় অঞ্চলের প্যারাবন নিধনের উৎসবে মেতেছে।
সৃজিত প্যারাবনের বাইন,কেরবা নুনিয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন চললেও খবর নেই বনবিভাগের। ১৯৭৭-৮৬ সালে ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সৃষ্টি করা হয় তৎকালীন সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। এসব এলাকা হতে হাজার হাজার একর আয়তন বেষ্টিত সবুজ শ্যামল বড় বড় বাইন ও কেরবা নুনিয়া গাছ প্রভাবশালী চক্র কেটে সাবাড়ে ব্যস্ত, যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বহলতলী উপকুলীয় পাউবো বেঁড়িবাধ।
এলাকাবাসী জানায়, উপকূলীয় এই প্যারাবন ১৯৯১ ও ১৯৯৭ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রোয়ানোসহ বিভিন্ন সময়ে জলোচ্ছ্বাস থেকে এলাকার লোকজনকে রক্ষা করলেও এখন ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা করার জন্য এ এলাকায় প্যারাবন নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুটাখালী ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গাছ নিধন করার কারণে চিংড়ি ঘের, লবণ মাঠ ও অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ এখন হুমকির মুখে। প্যারাবনের দক্ষিণ পশ্চিম ও উত্তর পাশে যাঁরা চিংড়ি ঘেরের মালিক, তাঁরাই চিংড়িঘের তৈরি করার জন্য নির্বিচারে গাছ নিধন করে পাচার করছে।