প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিলও নেমেছিল রাজপথে। যাতে পুলিশ বাধা দেওয়ার পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জও করেছে।
রাজধানীব্যাপী এসব বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দাবি উঠেছে, সকল ধর্ষকদের সর্বোচ্চ সাজা ও সেই রায় কার্যকরের। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি উঠেছে।
মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) টানা দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কাকরাইল মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব, জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে সমবেত হন আন্দোলনকারীরা।
শাহবাগ মোড়ে ‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে গণজমায়েত করে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন কবি, লেখক, ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।
কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কবি সৈকত আমিন বলেন, ধর্ষণ প্রতিহত করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। দেশে এমন ব্যর্থ মন্ত্রণালয়ে আমরা ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এমন কোন দেশ নাই যেখানে ধর্ষণ হয় না’। তার যদি লজ্জা থাকতো, তবে নাকে খত দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে তিনি বের হয়ে যেতেন।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া প্রায় প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন, যুব সংগঠনের নেতাকর্মীরা জড়িত। এমন পরিস্থিতিতে ‘ধর্ষণ সব জায়গায় হয়’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এহেন মন্তব্য প্রমাণ করে তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। আমরা এই ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আর দেখতে চাই না।
‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারেই দুপুর সোয়া একটার দিকে শাহবাগ মোড় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে কালো পতাকা মিছিল বের করা হয়। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের বিপরীত পাশে মিছিল পৌঁছাতেই আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। যাতে পাঁচজন আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
কলাবাগান ছাত্র ইউনিয়নের সদস্য সাদিয়া ইমরোজ ইলা বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জে মোহাম্মদপুর থানা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন শুভ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক আসমানি আশাসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সন্ধ্যায় শাহবাগ মোড় থেকে মশাল মিছিলও বের হয়।
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সকাল থেকেই উত্তাল ছিলো জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বর। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে গণধিক্কার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ‘অযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সারাদেশে যখন একের পর এক নারী ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটছে। জনগণের এই চরম দুঃসময়ে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাকে জনগণ ঘৃণাভরে বর্জন করেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বাংলাদেশ আর ভালো নেই। ধর্ষকও নির্যাতনকারীদের বর্বরতা ও পৈচাশিক উন্মাদনা বেড়েই চলেছে। আর ধর্ষণের শিকার, নির্যাতনের শিকার নারী, বোন ও কন্যাদের আহাজারিতে বাংলার আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে।
মঙ্গলবার একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জয়ের আলো, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, সোনাইমুড়ি জনকল্যাণ সমিতি, বাংলাদেশে নারী সাংবাদিক সমিতি মানববন্ধন করেছে।
উত্তরা ও কাকরাইলে সড়ক অবরোধ
ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর উত্তরায় বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে তারা উত্তরা হাউজ বিল্ডিং চৌরাস্তা এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। ঘণ্টাখানেক পরে সড়ক ছেড়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে থাকেন।
একই দাবিতে রাজধানীর কাকরাইল মোড়েও বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে তারা কাকরাইল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ধর্ষণবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
সংসদের দক্ষিণ প্লাজার সামনে প্রতিবাদী সমাবেশ
পরিবেশবাদী ছাত্র-যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিটি বহ্নিশিখার উদ্যোগে মঙ্গলবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় মানববন্ধন ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়এতে লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ধর্ষকের কোন বাবা নেই, কোন মা নেই, কোন জাত নেই, কোন ধর্ম নেই— তার একমাত্র পরিচয় সে ধর্ষক। ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভেদে আসুন সবাই ধর্ষকের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলি। আমাদের মা-বোনেরা নিরাপদে চলাফেরা করুক আমাদের সন্তানেরা নিরাপদে বেড়ে উঠুক।
স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, পাহাড় থেকে সমতল কোথাও নিরাপদ নয় আমাদের মা-বোনেরা। খুন, ডাকাতি, অপহরণ যেমন বাড়ছে, তেমনি বেড়ে চলেছে ধর্ষণের ঘটনা—এটি বড় ভাবনার বিষয়।











