শরীয়াহ আইনে ধর্ষণের বিচার দাবি হেফাজতের

হাটহাজারীতে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে হেফাজতের প্রতিবাদ সমাবেশ
হাটহাজারী প্রতিনিধি:: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে বিবস্ত্র করে বর্বরোচিত নির্যাতন চালানোর ঘটনায় সহ সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের প্রতিবাদ ও শরীয়াহ আইনে ধর্ষণের বিচার দাবীতে হাটহাজারীতে বিশাল প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার(০৫ অক্টোবর)আছর নামাজের পর উপজেলার ডাক বাংলো চত্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী উপজেলা শাখার সিনিয়র সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ আলী কাসেমীর সভাপতিত্বে ও মাওলানা কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে হেফাজত হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জী বলেন, সারাদেশে যেভাবে নারী নির্যাতন ঘটনা ঘটছে তাতে আমরা উদ্বিগ্ন।সম্প্রতি নোয়াখালীর ঘটনাটি আইয়্যামে জাহেলিয়ার বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে।এভাবে একটি সমাজ,একটি দেশ চলতে পারেনা।সারা দেশে বিচারের জন্য ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের দেড় লক্ষাধিক মামলা ঝুলে আছে। এসব মামলার বিচার চলছে ঢিমেতালে। বছরে নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৩.৬৬ শতাংশ মামলা। আর সাজা পাচ্ছে হাজারে মাত্র সাড়ে চারজন। সাজার হার ০.৪৫ শতাংশ। আইনে ত্রুটি, পুলিশি তদন্তে ত্রুটি এবং অবহেলা, ফরেনসিক টেস্টের সীমাবদ্ধতা, প্রভাবশালীদের চাপ এবং সামাজিক কারণে এ রকম হচ্ছে বলে মনে করে ধর্ষণের শিকার নারী ও তার পরিবারকে আইনি সহায়তা দেওয়া মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা বলেন,১৬০ বছর আগে প্রণীত ধর্ষণের সংজ্ঞা ও শাস্তি উভয়ই ধর্ষণ প্রতিরোধে সহায়ক নয়।ধর্ষণকে বিশেষ অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে বিশ্বের অনেক দেশ কঠোর শাস্তির বিধান করলেও বাংলাদেশের আইন ও বিচারে ধর্ষণ আর দশটা অপরাধের মতোই বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সঙ্গে মৃত্যু না হলে মৃত্যুদণ্ড নেই, শুধু যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। ধর্ষণ সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধের একটি। ধর্ষণ শারীরিক নিপীড়নের পাশাপাশি ভিকটিমকে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করে। বিনা দোষে ধর্ষিতাকে সমাজে হেয় হতে হয়। ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে এবং দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশের সরকার অতি কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে। চীনে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে ধর্ষকের যৌনাঙ্গ কেটে দেওয়া হয়। ইরানে সাধারণত ধর্ষককে জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আফগানিস্তানে ধর্ষণের শাস্তি রায়ের চার দিনের মধ্যে কার্যকর করা হয়। আর শাস্তিটি হলো ধর্ষকের মাথায় গুলি করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর। উত্তর কোরিয়া ধর্ষণের বিচার বা শাস্তির জন্য বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ করে না। সেখানে ধর্ষককে ফায়ারিং স্কোয়াডে নিয়ে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। সৌদি আরবে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে রায় ঘোষণার পর দ্রুত জনসমক্ষে শিরশ্ছেদ করে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতে যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণের সাজা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড। এ ক্ষেত্রে কোনো ক্ষমা নেই, ধর্ষণ করলেই অপরাধ প্রমাণের সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড পেতে হবে। মিসরে ধর্ষককে বরাবরই যেকোনো জনাকীর্ণ এলাকায় জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়, যেন অন্যরা সেটি দেখে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। বক্তরা সিলেট-নোয়াখালি সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের তীব্র প্রতিবাদ ও যথাযত কর্তৃপক্ষের কাছে শরীয়াহ আইনে ধর্ষণের বিচারের জোর দাবী জানান।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবু আহমদ,হেফাজতের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম মেহেদী,যুগ্ন সম্পাদক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ,দফতর সম্পাদক মাওলানা মাহমুদ হোসাইন,সহ প্রচার সম্পাদক মাওলানা এমরান সিকদার,সমাজ কল্যাণ সম্পাদক নিজাম সাইয়্যিদ,মাওলানা আসাদুল্লাহ মাওলানা ইকবাল গড়দুয়ায়ারী,মাওলানা হাবিব উল্লাহ,ছাত্রনেতা হাবিব আনোয়ার প্রমূখ।
প্রসংঙ্গত, গত ২ সেপ্টেম্বর বেগমগঞ্জে নিজ ঘরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ধর্ষণের চেষ্টা করে আসামিরা। তারা এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করে। গত এক মাস ধরে এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ওই নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল আসামিরা। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায়, ঘটনার ৩২ দিন পর গত রবিবার দুপুরে নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় তারা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী গত রবিবার রাত পৌনে ১২টায় পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলায় নয়জনকে আসামি করা হয়। এদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টা ও শ্লীলতাহানির ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মামলার প্রধান আসামি বাদল এবং দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত র‌্যাব-১১-এর সাঁড়াশি অভিযানে বাদলকে ঢাকা হাইওয়ে এবং দেলোয়ারকে অস্ত্রসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের জয়কৃঞ্চপুর গ্রামের খালপাড় এলাকার হারিদন ভূঁইয়া বাড়ির শেখ আহম্মদ দুলালের ছেলে মো. আব্দুর রহিম (২০) ও একই এলাকার মোহর আলী মুন্সি বাড়ির মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে মো. রহমত উল্যাহ (৪১) নামের ২ আসামিকে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড থেকে গ্রেপ্তার করে।