ওজন ও পরিমাপকে ঠকছে ক্রেতারা

ভোক্তাদেরকে নিরাপদ মানসম্মত খাদ্য ও ভোগ্যপণ্য সঠিক মান ও সঠিক পরিমাপে ক্রয় নিশ্চিতে দেশব্যাপী বিএসটিআই এর নিয়মিত সার্ভিল্যান্স টিম ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধ উৎপাদনারী, সরবরাহকারী, ও বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তারই অংশ হিসাবে ০৪ অক্টোবর ২০২০ বিএসটিআই চট্টগ্রাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম কর্তৃক যৌথ বাজার সার্ভিল্যান্স অভিযানের মাধ্যমে নগরীর রেয়াজউদ্দীন বাজারে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, ফলের দোকান, মাংশের দোকান ও মুরগির দোকান যাচাই করা হয়। যাচাই কালে মের্সাস আলমগীর স্টোর, ৬০৪ স্টেশন রোড়, রেয়াজ উদ্দীন বাজার কর্তৃক বিএসটিআই মান সনদ বিহীন মুধু বিক্রয়, বিতরণ ও সংরক্ষন করার অপরাধে “বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন ২০১৮” অনুযায়ী ১টি, হাজী জালাল স্টোর, ১০৬ সোলতান মার্কেট, রেয়াজউদ্দীন বাজার, চট্টগ্রাম কর্তৃক মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ বিহীন অবৈধ ঘি বিক্রয়, বিতরণ ও সংরক্ষনের  অপরাধে এবং মোর্সাস নাছিরের মুরগির দোকান(নাছির চিকেন হাউজ), জলিল টাউয়ার, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী রোড়, রেয়াজ উদ্দীন বাজার, চট্টগ্রামকে ওজনে কারচুপি করায় প্রতিষ্ঠান দ’ুটির বিরুদ্ধে “ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন ২০১৮” অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অভিযান পরিচালনা কালে বিএসটিআই চট্টগ্রাম কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক নুর মোহাম্মদ মোস্তফা, পরিদর্শক মুকুল মৃদা, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস ও ক্যাব পাঁচলাইশ থানার সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর উপস্থিত ছিলেন।

নগরীর প্রশাসনের নাগের ডগায় নগরীর অন্যতম পাইকারী ও খুচরা বাজার বেয়াজউদ্দীন বাজারের মতো জায়গায় এখনও বাটখারা দিয়ে ওজন পরিমাপ করা হচ্ছে। যাতে দেখা যাচ্ছে মুরগিতে ১ কেজিতে দেয়া হচ্ছে ৭৭৬ গ্রাম আর ২ কেজিতে ১.৫৩৯ গ্রাম। বাজার তদারিকেতে উপস্থিত ক্যাব নেতৃবৃন্দ হতবাক হয়ে যান কিভাবে প্রশাসনের বিভিন্ন লোকজনের নজরদারি সত্বেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা এ ধরনের প্রতারণা করে যাচ্ছেন। বিএসটিআই এর “ওজন ও পরিমাপ মানদন্ড আইন ২০১৮” অনুযায়ী বাজারে বাটখারার পরিবর্তে ডিজিটাল স্কেল ব্যবহার করার কথা এবং ওজন পরিমাপ যন্ত্রটির মান বছরে একবার বিএসটিআই কর্তৃক ক্যালিব্রেশন/পরিক্ষীত হবার কথা থাকলেও কোনটিই করা হয়নি। অধিকন্তু পরিমাপ যন্ত্রটির ক্যালিব্রেশন/পরীক্ষার স্টিকার/সনদটি দৃশ্যমান স্থানে লটকানোর কথা থাকলেও সাধারনত তা মানা হয় না। ব্যবসায়ীরা এমন ভাবে স্টিকারটি রাখেন যাতে শুধুমাত্র বিএসটিআইএর কর্মকর্তারা পরিদর্শনের সময় দেখতে পান। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার ক্রেতা ওজনে কারচুরি শিকার হচ্ছেন।

উল্লেখ্য চট্টগ্রামের রেয়াজউদ্দীন বাজারটি নগরীর অন্যতম পাইকারী ও খুচরা আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের অন্যতম বাজার। এই বাজার থেকে নগরীর অধিকাংশ বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা খাদ্য-পণ্য ক্রয় করে থাকেন। আবার সাধারণ ক্রেতারাও এখান থেকে সুলভ মূল্যে ক্রয় করে থাকেন। প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অতিনিকটবর্তী হবার কারনে যে কোন অভিযানে এই বাজারে প্রথমেই অভিযান পরিচালনা করা হলেও প্রশাসনের লোকজনকে তোয়াক্কা না করে বাটখারা দিয়ে ব্যবসা করা, ডিজিটাল স্কেল ব্যবহার না করা ও ওজনে কারচুপির ঘটনাটি প্রমান করছে প্রশাসনের নজরের বাইরে নগরীর অলিতে গলিতে ও শহরের উপকন্ঠের বাজারগুলিতে ব্যবসায়ীরা কিভাবে ওজনে কারচুপি করছে, মানহীন ভেজাল ও অবৈধ খাদ্য-পণ্য বিক্রি এবং মূল্য সন্ত্রাসে জড়িত।

বিষয়টি নিয়ে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন এ প্রতিবেদককে বলেন ক্রেতারা ওজন, পরিমাপকে দারুনভাবে কারচুপির শিকার। প্রশাসনের নাগের ডগায় যদি ব্যবসায়ীরা এভাবে মানুষকে প্রতাররিত করতে পারেন। তাহলে শহরের উপকন্ঠে ও গ্রামে এ অবস্থা আরও ভয়াবহ। মানহীন খাদ্য-পণ্য বিক্রি ও ওজনে কারচুপির বিষয়ে জেলা প্রশাসন, বিএসটিআই, ভোক্তা সংরক্ষন অধিদপ্তর, র‌্যাব, পুলিশের অভিযান আরও জোরদার করা দরকার। একই সাথে শাস্তির পরিমানও কঠিন হওয়া দরকার। ৫-১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে শাস্তি দেয়া হলে ব্যবসায়ীরা আরও বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য জেল জরিমানার পাশাপাশি দোকান সিলগালা ও বন্ধ করার বিষয়টিও চিন্তা করতে হবে।