পোষা কুকুরের জন্য জীবন তুচ্ছ করলেন মার্কিন নারী

হিউম্যান ২৪ ডেস্ক : পোষা কুকুর নিজের জীবন বিপন্ন করে  মনিবকে উদ্ধার করেছে—এমন ঘটনা অনেক আছে। এবার কুকুরের জন্যও  মনিব জীবন তুচ্ছ করার ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন ফ্লোরেন্স-বিধ্বস্ত এলাকায় গত শুক্রবার।

মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, , ক্রিস্টিন মেইনহোল্ড নামের এক নারী হারিকেন ফ্লোরেন্সের পূর্বাভাসের পরও কুকুর নিয়ে বাড়িতে থেকে যান। শেষ পর্যন্ত অনলাইন প্রচারাভিযানের মাধ্যমে কিছু মানুষের সহায়তায় কুকুরসহ নিরাপদ গন্তব্যে যেতে পারেন তিনি।

স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য নর্থ ক্যারোলাইনায় আঘাত হানে ফ্লোরেন্স। ঝড়ে এখন পর্যন্ত মা-শিশুসন্তানসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। ঝড়ে বৃষ্টির প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় সাড়ে তিন ফুট উচ্চতায় পানি জমেছে। কোনো কোনো এলাকায় পানির উচ্চতা ১০ ফুট। নর্থ ক্যারোলাইনার আট লাখ বাড়িঘর বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ-সংযোগ আবার চালু হতে কয়েক দিন, এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। ২০ হাজার বাসিন্দা বিভিন্ন জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। ঝড়টি এখন সাউথ ক্যারোলাইনার দিকে যাচ্ছে।

ঝড়ের এমন সব সংবাদের ভিড়ে পোষা কুকুরের প্রতি ভালোবাসা দেখিয়ে সংবাদে উঠে এসেছেন ক্রিস্টিন মেইনহোল্ড।
সিএনএনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ক্রিস্টিনের সাতটি পোষা কুকুর রয়েছে। ঝড়ের আগে কর্তৃপক্ষ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বললে কুকুর নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। কিন্তু এত দ্রুত সময়ে সাতটি কুকুরকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে না পেরে প্রাণের মায়া ছেড়ে বাড়িতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। গত বুধবার সিএনএনে এই সংবাদ প্রচারের পর ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ান কিছু মানুষ। ক্রিস্টিন যেন সাতটি কুকুর নিয়ে টেনেসি অঙ্গরাজ্যে তাঁর পরিবারের কাছে যেতে পারেন, সে লক্ষ্যে ভ্যান ভাড়া করতে অর্থ সংগ্রহ করেন তাঁরা। আর এ কাজে নেতৃত্ব দেন এক রেডিওর উপস্থাপক কেইট জেন্না।
এর আগে বুধবার বাড়িতে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ক্রিস্টিন সিএনএনকে বলেছিলেন, ‘আমি একাই কুকরদের উদ্ধার করি। ওই সময় আমি যা দেখেছি, তা কখনো ভুলব না। আমি এখন অনেকগুলো কুকুরের সঙ্গে বাস করছি এবং তাদের সঙ্গেই থাকার পরিকল্পনা করেছি।’

ক্রিস্টিন সাউথ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের মারটেল সৈকতের একদম কাছে থাকেন।

তিনি সিএনএনকে আরও বলেছিলেন, ‘সাতটি কুকুর নিয়ে যাত্রা করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। আমি যখন এই কুকুরগুলোকে উদ্ধার করেছি, তখনই আমি ওদের বাকি জীবন ভালোবাসার ও দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছি। আমি ওদের ছেড়ে যেতে পারি না। আমি ভাবতেই পারি না, ওদের বিপদে ফেলে দিয়ে আমি কোথাও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে যাব।’

অর্থ সংগ্রহে নেতৃত্ব দেওয়া কেট জেন্না সিএনএনকে বলেন, ফেসবুকে ১৬ জন এই অর্থ সংগ্রহের কাজে ছিলেন। সহায়তার জন্য ৫ হাজার ২০০ ডলার (প্রায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা) প্রয়োজন ছিল। এই অর্থ পাওয়া পর্যন্ত প্রচার চালানো হয়। এই অর্থ দিয়ে একটি ইউ-হল ভ্যান ভাড়া করে ক্রিস্টিন ও তাঁর কুকুরদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।