বিশ্বস্ততা, ত্যাগ ও আদর্শে অবিচল ৪৭ বছরের পথচলায় দৃষ্টান্ত অ্যাডভোকেট ইফতেখার মহসিন

জাহেদ কায়সার, প্রিয় চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে যে কজন বিএনপি নেতা প্রতিষ্ঠাকাল থেকে দলের যুক্ত তাদের মধ্যে অন্যতমঅ্যাডভোকেট আলহাজ্ব মোঃ ইফতেখার হোসেন চৌধুরী (মহসিন) চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ঁজন্ম। পেশায় একজন আইনজীবী, চার দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছেন।
স্কুলজীবনে বিএনপির সূচনালগ্নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সান্নিধ্যে এসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন তিনি। ছাত্রদলের একজন কর্মী হিসেবে রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি চট্টগ্রামের ছাত্র ও মূলধারার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করেন।
১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী এরশাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হন। তবুও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আপোষহীন নেতৃত্বের প্রতি অবিচল থেকে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের একমাত্র সভাপতি, যাকে বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় সভাপতি পদে মনোনীত করেন।
১৯৯০ সালের ১৩ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে চট্টগ্রামে সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য গঠনের লক্ষ্যে তাঁর সভাপতিত্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটিতে তিনি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়া নিজে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে তাঁকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত করেন।
নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন কলেজে জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী। স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতন আন্দোলনে তিনি ছিলেন সম্মুখসারির ছাত্রনেতাদের একজন।
বিএনপি সরকার গঠনের পরও তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ও সততা বজায় রাখেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনো ধরনের দুর্নীতি, সন্ত্রাস বা চাঁদাবাজির সঙ্গে নিজেকে জড়াননি। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর সফরসঙ্গী হিসেবে একাধিক রাষ্ট্রীয় সফরে অংশ নেন তিনি।
১৯৯৬ সালের পর এবং ১/১১-এর রাজনৈতিক সংকটকালেও তিনি রাজপথ ছাড়েননি। বিএনপির দুঃসময়ে তিনি ও ডা. শাহাদাৎ হোসেন চট্টগ্রামে দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
২০১৮ ও ২০২৪ সালে তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে সংসদ সদস্য হওয়ার প্রস্তাব পেলেও তা প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। ২০২৪ সালের গণ-আন্দোলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রতিদিন রাজপথে সক্রিয় ছিলেন অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী। আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তারও হন। পরে মুক্তি পেয়ে আবারও রাজপথে নেমে আন্দোলনে যুক্ত হন। এ যাত্রায় তিনি সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি, (সভাপতি- আহমদ খলিল খান ২০০৯-২০১১), যুগ্ম আহ্বায়ক চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি,(আহ্বায়ক- জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি ২০০৯), সহ-সভাপতি (সভাপতি- জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি ২০১১-২০১৯), সভাপতি (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল (১৯৯০-৯২), সাধারণ সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল (১৯৮৮-৮৯), সহ-সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ (রিজভী-ইলিয়াস কমিটি ১৯৯১-৯২), সহ-সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ (মিলন-আলম কমিটি ১৯৯৩-৯৬), সহ-সভাপতি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সংসদ (রিজভী-মিলন কমিটি ১৯৯৭-০১), সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুব দল কেন্দ্রীয় সংসদ(মির্জা আব্বাস-গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ১৯৯৭-০২), সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ, (আহ্বায়ক, আমান উল্লাহ আমান১৯৯০-৯১), সিনিয়র সদস্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি, (২০১৯-চলমান), সদস্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি (১৯৯১-২০০৩), সদস্য সচিব সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য চবি (১৯৯০), সদস্য (সিনিয়র), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম (২০১৯-২০২৫), সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বাঁশখালী থানা (১৯৯০-২০০৩), সদস্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৮৬-৮৭),
আহ্বায়ক জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হাটহাজারী থানা(১৯৮৬-৮৭), সাংগঠনিক সম্পাদকজাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হাটহাজারী থানা (১৯৮৩-৮৬), আহ্বায়ক (প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক) ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী সিটি কর্পোরেশন ওয়ার্ড ছাত্রদল (১৯৮১-৮৩)।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালীকে একটি উন্নত, আধুনিক ও মডেল জনপদে রূপান্তরের প্রত্যয় ব্যক্ত করে আসন থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, অ্যাডভোকেট ইফতেখার হোসেন চৌধুরী বর্তমানে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম জেলার সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি তিনি একজন কৃতি ফুটবলার এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক, সামাজিক ও মানবিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।