করোনাভাইরাস মহামারির এ দুঃসময়ে অর্থিক সংকটে পড়ে শহর ছাড়ছে মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ। গত মার্চে দেশে সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় হাজার হাজার ভাড়াটিয়া নগর ছেড়ে গেছে। অনেকে কম ভাড়ার বাড়িতে উঠছে। সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি বিবেচনায় দুর্যোগ কেটে গিয়ে কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেটা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না।
এই প্রেক্ষাপটে বাড়িওয়ালারা, যাঁরা শুধু বাড়িভাড়ার ওপর নির্ভরশীল তাঁরা ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটিয়া ধরে রাখার কৌশল নিয়েছেন। কোনো কোনো বাড়িওয়ালা কমিয়েছেন সার্ভিস চার্জ। অনেকে ভাড়া না কমিয়ে অপেক্ষা করছেন, ভাড়াটিয়া বাসা ছাড়ার নোটিশ দিলে কমাবেন।
বাড়ির মালিক মতিউর রহমান। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত এই প্রকৌশলী আবাসনপ্রতিষ্ঠানকে দিয়ে বাড়ি করিয়েছেন। সেখানে তাঁর এখন পাঁচটি ফ্ল্যাট আছে। তাঁর আয় বলতে এই ফ্ল্যাটভাড়া। এরই মধ্যে মতিউর রহমান বাড়ির প্রহরীকে বলে দিয়েছেন যে কোনো ভাড়াটিয়া ভাড়া কম দিতে চাইলে যাতে আপত্তি না করেন। মতিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বলতে গেলে গণহারে ঢাকা ছাড়ছে ভাড়াটিয়ারা। ভাড়ার আয়ে আমার সংসার চলে। ভাড়াটিয়া চলে গেলে চরমভাবে বিপদে পড়তে হবে। সে কারণে সিদ্ধান্ত নিয়েছি ভাড়া কমিয়ে হলেও ভাড়াটিয়া ধরে রাখার।’
ভাড়া থাকেন সুবীর দত্ত। তিনি বলেন, ‘আমি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। করোনায় চাকরি যায়নি, তবে বেতন কমেছে। বর্তমানে আমি ১৭ হাজার টাকায় ভাড়া থাকি। বেতন কমার কারণে এই বাসা ছেড়ে আরো কমে ১২ হাজার টাকার মধ্যে বাসা খুঁজছিলাম। বাড়ির মালিককে নোটিশ দেওয়ার পর তিনি আমার সঙ্গে আলোচনা করে ভাড়া ১৩ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। তাই আর বাসা ছাড়িনি।’
কাউন্সিলর মাসুদুর রহমান বাবুল মোল্লা বলেন, ‘করোনার প্রথম দিকে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালার মধ্যে ভাড়া নিয়ে বিরোধের বেশ কিছু সালিস করতে হয়েছে। এখন খবর পাচ্ছি, বাড়িওয়ালারা স্বেচ্ছায় ভাড়া কমিয়ে ভাড়াটিয়া ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।’
মোহাম্মাদ আলী নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাসের জন্য বেশ কিছু টিনশেড ঘর করেছেন। তিনি বলেন, ‘আগে আমি ঘরপ্রতি তিন হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেছিলাম। বর্তমানে অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি। তার পরও বেশ কয়েকটি পরিবার বাসা ছেড়ে দিয়েছে। ওইগুলোতে আর নতুন ভাড়াটিয়া পাচ্ছি না।’
ভাড়ায় বসবাস করতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নুরুল আলম। গত মাসে তিনি বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিয়েছিলেন। বাড়িওয়ালা তাঁর ভাড়া কমিয়েছেন চার হাজার টাকা।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাড়ির মালিকরা আপাত কৌশল হিসেবে ভাড়া কমিয়েও ভাড়াটিয়া ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। নাম প্রকাশ না করে খিলগাঁও এলাকার একজন বাড়ির মালিক বলেন, এখন যাতে বাসা খালি না থাকে সে জন্য ভাড়া কমানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। অবস্থা স্বাভাবিক হলে আগের ভাড়ায় ফিরে যাবেন।
