বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস জিনোমিক পর্যায়ে ৫৯০ বার ও প্রোটিন পর্যায়ে ২৭৩ বার পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে গত ১৬ই জুলাই পর্যন্ত এই ভাইরাসের ২২২টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করা সম্ভব হয়েছে। এরমধ্যে ১৭১টি করোনা ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স করেছে বিসিএসআইআর’র বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে অবহিত করতে রোববার রাজধানীর সাইন্স ল্যাবের বিসিএসআইআর কার্যালয়ে এক সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় জানানো হয়, ভাইরাসটি প্রোটিন লেভেলে ২৭৩ বার মিউটেশন করেছে এবং ৩৮টি স্পাইক পরিবর্তন করেছে। এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ৬৭ হাজার ৫২৪ এর বেশি করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স ডাটা বিশ্বজুড়ে গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটা (গ্যাসএইড)-তে প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১৭৩টি করোনা ভাইরাসের জীবন রহস্য তথ্য পাঠানো হয়েছে। এগুলো থেকে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের করোনা ভাইরাসটি ইতালির ভাইরাসটির সঙ্গে বেশি নিবিড়।
বিজ্ঞানীরা জানান, একটা করোনা ভাইরাসে ১ হাজার ২৭৪টি প্রোটিন থাকে।
এর মধ্যে ‘ডি৬১৪জি’ নম্বর প্রোটিনটি বাংলাদেশে সক্রিয়। যেসব দেশে করোনা মহামারি আকারে ছড়িয়েছে সেসব দেশে ভাইরাসটির জিনে ৩৪৬ নম্বর থেকে ৫১২ নম্বর প্রোটিন মারাত্মকভাবে সক্রিয় ছিল, বাংলাদেশে এখনো এটি দেখা যায়নি।
পরিষদের জিনোমিক রিচার্স ল্যাবরেটরি ইনচার্জ ও গৃহীত প্রকল্পের পরিচালক মো. সেলিম খান বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে ইতিমধ্যে তার জিনেমিক লেভেলে ৫৯০টি ও প্রোটিন লেভেলে ২৭৩টির অধিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অর্থাৎ সবগুলো জিন পরিবর্তন হলেও সবগুলো প্রোটিন পরিবর্তন হয়নি, যা ফুসফুসে একটি ভূমিকা রাখছে। ফলে সেকেন্ডারি লেভেলে সংক্রমণটা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, নতুন নতুন অস্বাভাবিক সব জিন আমাদের সামনে আসছে, যা গবেষণার ক্ষেত্রকে আরো বিস্তার করছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩০০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এই কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে তা করোনার বিপক্ষে অ্যান্টিবডি ও ওষুধ প্রস্তুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে জানান তিনি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার জিন রহস্য বা জিন সিকোয়েন্স উন্মোচন হচ্ছে ভাইরাসটির পূর্ণাঙ্গ জীবন রহস্য বের করা। এতে করে করোনা ভাইরাসের গতি, প্রকৃতি, আচরণগত বৈশিষ্ট্য জানা যাচ্ছে। জিনের ভেতরেই সব তথ্য লুকানো থাকে। জিন রহস্য বের করার মাধ্যমে কোনো প্রাণী বা করোনা ভাইরাসের রূপান্তরের (মিউটেশন) ধারা বোঝা যায়। এতে করে ভাইরাসটির গতি-প্রকৃতি বুঝে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ সুগম হয়।
বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসটির ধরন আলাদা বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, করোনা ভাইরাসটি বিভিন্ন পরিবেশে গিয়ে দ্রুত পরিবর্তন করে। ফলে ভ্যাকসিন তৈরির কাজটি দেরি হচ্ছে। যদি করোনা ভাইরাসের শরীরের প্রোটিন ও নিওক্লিড লেভেলে এত রূপান্তর না হতো তবে আরো দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরি করা যেত।
তবে আশার কথা করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য যে বিপজ্জনক প্রোটিনগুলো দায়ী, সেই প্রোটিনগুলো বাংলাদেশে এখনো সক্রিয় হতে পারেনি।