আমরা যতই যান্ত্রিক হই বইয়ের চাহিদা শেষ হবে না: শেখ হাসিনা

বইমেলাকে বাঙালীর প্রাণের উৎসব বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বইমেলা হচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব। এ আয়োজন বাঙালি জাতিসত্ত্বা দাঁড় করাতে বিশেষ সহায়ক হিসেবে কাজ করে। যখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলাম না, তখন নিয়মিত বইমেলায় এসেছি। এখন মেলায় আসলে দর্শনার্থীদের সমস্যা হয়। নিরাপত্তার কারণে চলাচল বিঘ্ন হয়। এ কারণে আসতে পারি না। তবে মনটা বইমেলাতেই পড়ে থাকে।’

অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও বুদ্ধিবৃত্তিক উৎকর্ষের প্রতীক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির আয়োজনে শুক্রবার বিকেল ৩টায় আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। ১৬ বারের মতো বইমেলার উদ্বোধন করে রেকর্ড গড়েন প্রধানমন্ত্রী এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখেন।

এ অনুষ্ঠানে বিদেশি অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা ভাষার প্রখ্যাত কবি শঙ্খ ঘোষ এবং মিশরের লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক মোহসেন আল-আরিশি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাঙালি ভাষা-সংস্কৃতি এবং বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।

এ সময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন। এ মেলা এবং এ আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের ধরে রাখতে হবে। তাহলে পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। অনলাইনে বই পাওয়া যায়। অনেকে মোবাইলে এবং বিভিন্ন ডিভাইসে বই পড়েন। কিন্তু বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে পড়ায় যে আনন্দ সে আনন্দ অনলাইনে কিংবা ডিভাইসে পাওয়া যায় না। তারপরও অনলাইনে বই রাখতে হবে। কারণ এ পদ্ধতিতে যেকোন লেখা দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারাবিশ্বে পৌঁছানো যায়।

শুক্রবার বিকেলে সাড়ে ৪টা নাগাদ অমর একুশে বইমেলা ২০১৯ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একুশে বইমেলা এবার পর্দাপণ করল ৪০ বছরে। এর আগে বেলা ৩টায় সেখানে পৌঁছান তিনি। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে গ্রন্থমেলার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর পর সূচনা সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ পরিবেশন করা হয় এবং পরে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

এবারের বইমেলায় ৫২৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। এছাড়া ১৮০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের ১৫০টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৯৫টি প্রতিষ্ঠানের ৬২০টি ইউনিটসহ মোট ৪৯৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭০টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া বাংলা একাডেমিসহ ২৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে ২৪টি প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে ১৮০টি লিটলম্যাগকে ১৫৫টি স্টল দেয়া হয়েছে। ২৫টি স্টলে দুটি করে লিটল ম্যাগাজিনকে স্থান দেয়া হয়েছে। স্টল পেয়েছে অন্য ১৩০টি প্রতিষ্ঠান।

প্রতিবছরের মতো একুশে গ্রন্থমেলা ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইয়ের দোকানগুলো। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে।