করোনা পরীক্ষা না করে মনগড়া রিপোর্ট: সাবরিনা গ্রেফতার

করোনা পরীক্ষা না করে মনগড়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফ চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রোববার (১২ জুলাই) দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ।

এর আগে তিনি জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডা. সাবরিনাকে ডেকেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে বলেও তখন জানান সংশ্লিষ্টরা।

জেকেজি হেলথ কেয়ারের সিইও আরিফ চৌধুরীর প্রতারণার নেপথ্যে ছিলেন তার স্ত্রী ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী। জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে সব যোগাযোগ রক্ষা করতেন সাবরিনাই।

গত ২৩ জুন করোনার ভুয়া সনদ দেওয়া, জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে আরিফুলসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। গ্রেফতারের পর থানা হাজতে থাকা অবস্থায় আরিফুলের ক্যাডার বাহিনী ভাঙচুর ও হামলা করে থানায়। মারধর করে পুলিশকে।

এছাড়া রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজে নমুনা সংগ্রহের বুথ বসিয়ে সেখানে প্রশিক্ষণের নামে নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগও পাওয়া যায়। কলেজের কক্ষে নারী-পুরুষের আপত্তিকর অবস্থানসহ নানা অনৈতিক কাজে বাধা দিলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্রদের ওপরও হামলা করে আরিফুলের লোকজন।

অভিযোগ পাওয়া যায়, রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নজনকে হুমকি দিতেন আরিফ। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম ব্যবহার করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককেও দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি।

জানা যায়, জেকেজির কর্ণধার স্বামী-স্ত্রী মিলে করোনা টেস্টের ভুয়া সনদ বিক্রি করেছেন। প্রতিটি টেস্টের জন্য জনপ্রতি নিয়েছেন সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। আর বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি তারা নিতেন ১০০ ডলার।

করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকায় গ্রেফতার হওয়া জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

রোববার (১২ জুলাই) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।

অফিস আদেশে বলা হয়, শেরে বাংলানগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সাবরিনা সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান ও অর্থ আত্মসাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বিধায় রোববার তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

‘যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ব্যতিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত থাকা এবং অর্থ আত্মসাৎ ‘সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেহেতু ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা, ২০১৮ এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।’

তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্ত হবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও উপ-কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়। এরপর তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ।

এদিকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ডিজি বরাবর একটি চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন বলেন, গণমাধ্যমে হাসপাতালের চিকিৎসক সাবরিনাকে গ্রেপ্তারের সংবাদ আমরা জানতে পারি। পরে স্বাস্থ্য ডিজির বরাবর বিকেলে আমরা একটা চিঠি দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।