ব্যবসা ও জনবান্ধব বাজেট : মাহবুব

এবারের বাজেটকে জীবন ও জীবিকার, ব্যবসা ও জনবান্ধব উল্লেখ করে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, এ বাজেট অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে।

বৃহস্পতিবার (১১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।

চেম্বার সভাপতি বলেন, বাজেটে মোট ব্যয় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, মোট আয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৬ কোটি টাকা এবং ঘাটতি ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং একই সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গতি সঞ্চারের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট সময়োপযোগী। স্বাস্থ্য খাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ও কৃষি খাতে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে ৯৫ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান ইতিবাচক। তবে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ৩ দশমিক ৩২ কিমি দীর্ঘ টানেলের ৫১ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা/লাকসাম হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক দ্রুতগতির রেললাইন বাস্তবায়ন করা হবে বলে প্রস্তাবিত বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে। সমুদ্রবন্দরগুলোর পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নতুন কনটেইনার টার্মিনাল, ওভারফ্লো ইয়ার্ড, বে-টার্মিনাল ও বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান মাহবুবুল আলম।

তিনি বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আয়কর থেকে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, মূসক থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা এবং শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ২০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি, সর্বনিম্ন কর হ্রাস করে ৫ শতাংশ নির্ধারণ এবং সর্বোচ্চ করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করায় করদাতাদের উৎসাহিত করবে। মহামারীর কারণে রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ করদাতাদের জরিমানা ও সুদ ব্যতীত সময় বৃদ্ধি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।

আগামী ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড, সিকিউরিটিজ এবং পুঁজি বাজারে বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর প্রদানে বৈধ করার সুযোগকে স্বাগত জানিয়ে চেম্বার সভাপতি সবাইকে এ সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। এর ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ অর্থনীতির মূলধারায় যুক্ত হয়ে তারল্য সংকট নিরসনে সহায়ক হবে বলে মনে করেন তিনি। স্থানীয় উৎপাদনমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রীম কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা, রেয়াতের সময় ২ কর মেয়াদ থেকে বৃদ্ধি করে ৪ মেয়াদ করায় দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি ইত্যাদি সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ, রসুন ও চিনি আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রীম আয়কর ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ, পোল্ট্রি শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে হাঁস, মুরগির খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে অগ্রীম কর ৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২ শতাংশ নির্ধারণ করায় এসব পণ্যের মূল্য হ্রাস পাবে এবং সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য দেশে পিপিই, মাস্ক ইত্যাদি উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি এবং পিপিই, মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানির ওপর সমুদয় শুল্ককর মওকুফ করা হয়েছে। এছাড়া কোভিড-১৯ মোকাবেলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা এই ভাইরাস মোকাবেলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা, দেশে তৈরি পেরেক, স্ক্রু, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ইত্যাদিকে সুরক্ষা দিতে আমদানি শুল্ক আরোপে দেশে হালকা প্রকৌশল শিল্পের সম্প্রসারণ হবে। রপ্তানিমুখী গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল শিল্পে বিভিন্ন পণ্য ও পাদুকা শিল্পের ৩টি কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান এসব খাতের বিকাশে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

মানবসম্পদ উন্নয়নে হাইটেক কর্তৃপক্ষের অধীনে ২০২৩ সালের মধ্যে ৪০ হাজার তরুণ-তরুণীকে প্রশিক্ষণ প্রদান কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যে ১৮ হাজারের বেশি তরুণের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট উৎপাদন ও সেবা, ক্ষুদ্র ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ইত্যাদি খাতে দরিদ্র কৃষক, বিদেশ ফেরত প্রবাসী শ্রমিক এবং প্রশিক্ষিত বেকারদের আত্মকর্মসংস্থানে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করা হবে যা কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ৫০ লাখ মানুষকে নগদ অর্থ প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০০টি উপজেলায় সব দরিদ্র প্রবীণ ব্যক্তিকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা হবে এবং ৫ লাখ নতুন উপকারভোগীর জন্য ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ করা হবে। প্রতিবন্ধী সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১৮ লাখে উন্নীত করা হবে এবং এ বাবদ ২২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হবে। এসব কর্মসূচি দেশের অতি দরিদ্র মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সহায়ক হবে।