উখিয়ায় প্রবল বর্ষণে লণ্ডভণ্ড সড়ক উপসড়ক

কায়সার হামিদ মানিক,উখিয়া।
কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও সমুদ্রের জোয়ারের জলে উখিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শত শত মানুষ। এই পর্যন্ত উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে ৬ জন ও পানির স্রোতে ভেসে যাওয়া ৩ জনসহ ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুরো উপজেলার অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে জলবন্দী হয়ে পড়েছে অর্ধ লাখ মানুষ।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক যোগাযোগসহ অধিকাংশ গ্রামের রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এলাকার মৎস্য ঘের, পানের বরজ, ক্ষেত-খামারসহ গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জানা যায়, গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হলেও গত সোমবার বিকাল থেকে উখিয়ায় বিরামহীন এক নাগাড়ে বৃষ্টি হতে থাকে। এতে পুরো উপজেলার বানের জলে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয় ধ্বসে পড়েছে এলাকার মাটির ঘরবাড়ি। জলবন্দী হয়ে পড়েছে রত্নাপালং ইউনিয়নের পশ্চিম রত্না, সাদৃকাটা, খোন্দকার পাড়া, ভালুকিয়াপালং, গয়ালমারা, চাকবৈঠা, রাজাপালং ইউনিয়নের হাজীর পাড়া, মৌলভীপাড়া, মালভিটা, ঘিলাতলী, হরিণ মারা, হারাশিয়া, হিজলিয়া, তুতুরবিল, মধ্যম রাজাপালং, ডিগিলিয়া, বড়ুয়া পাড়া, পাতাবাড়ি, হিন্দুপাড়া, হরিনমারা, দুছড়ি, খায়রাতি, উত্তর পুকুরিয়া, সিকদারবিল, পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল, থাইংখালী, তাজনিমার খোলা, ঘোনার পাড়া, গৌজুঘোনা, পন্ডিত পাড়া ও হাকিম পাড়া বালুখালী, কাস্টমস। হলদিয়া পালং ইউনিয়েন চৌধুরী পাড়া, রুমখাপালং, বড়বিল, পাগলির বিল, জালিয়াপালং ইউনিয়নের লম্বরী পাড়া, পাইন্যাশিয়া, সোনাইছড়ি সহ বেশ কয়েকটি গ্রাম সহ প্রায় ৪৫টিরও অধিক গ্রামের মানুষ এখনও বন্দী অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সহশ্রাধিক বাড়িঘর, স্কুল-মাদ্রাসা ও অফিস-আদালত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যান চলা চল মোটামুটি স্বাভাবিক হলেও গ্রামীণ সড়কের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। কাদা মাটির কারণে যান চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ অব্যহত থাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কায় সতর্ককতা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে।
রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, এবারের বন্যায় গ্রামীণ সড়ক গুলো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বলেন, সাগরের জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় উপকূলীয় গ্রাম গুলো। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, এবারে বানের পানিতে মৎস্য ঘের গুলো ডুবে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। ইউনিয়নের রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, চিংড়ি ঘের সহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, উখিয়া সদর ষ্টেশনে হাটু পরিমান পানি ডুকে পড়ায় অসংখ্য দোকানের মালামাল নষ্ট হয়ে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।এদিকে সরকারী ভাবে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা না হলেও ব্যক্তিপর্যায়ে অনেকে বন্যার্তাদের সাহার্য্যে হাত বাড়িয়েছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, উখিয়ার বন্যা পরিস্থিতির অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিটি এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বারদের ও সিপিপি সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে এলাকার জনগনকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ার কাজ চালিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে গেছি। সাইক্লোন সেন্টার ও স্কুল গুলোতে বন্যার ক্ষতিগ্রস্তদের সরিয়ে নেওয়াসহ প্রতিটি এলাকার ব্যাপারে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি। এলাকার জনগনের প্রাণ রক্ষার ব্যাপারে যা যা করনীয় সবকিছু করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে উখিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রসাশক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে এবং উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে।