প্রকাশ্যে স্ত্রী-সৎ সন্তান ও এক যুবককে গুলি করে হত্যা করলো এএসআই

কুষ্টিয়ায় প্রকাশ্যে সড়কের পাশে স্ত্রী-সৎ সন্তান ও এক যুবককে গুলি করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী উপপরিদর্শকের (এএসআই) বিরুদ্ধে। ওই এএসআইয়ের নাম সৌমেন রায়। তাঁকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে শহরের পিটিআই সড়কের কাস্টমস মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত তিনজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন আসমা খাতুন ও তাঁর ৬ বছর বয়সী ছেলে রবিন এবং শাকিল নামের এক যুবক। আসমার বাড়ি কুমারখালীর নাতুরিয়া গ্রামে। তবে সন্তানকে নিয়ে তিনি কুষ্টিয়া শহরে বাবার বাড়িতে থাকতেন। শাকিল বিকাশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন।পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কাস্টমস মোড়ে তিনতলা একটি ভবনের সামনে আসমা তাঁর সন্তানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পাশে শাকিলও ছিলেন। হঠাৎ সেখানে গিয়ে সৌমেন প্রথমে আসমার মাথায় গুলি করেন। এরপর তিনি আসমার পাশে থাকা শাকিলের মাথায় গুলি করেন। ভয়ে শিশু রবিন দৌড়ে পালাতে গেলে তাকেও ধরে মাথায় গুলি করা হয়। আশপাশের লোকজন গুলি করা ব্যক্তিকে ধরতে গেলে তিনি দৌড়ে তিনতলা ভবনের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

এরপর লোকজন জড়ো হয়ে ওই ভবন লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। অস্ত্রোপচারকক্ষে গুলিবিদ্ধ শাকিল ও শিশু রবিনের মৃত্যু হয়।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি) মোস্তাফিজুর রহমান এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুষ্টিয়া পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এএসআই সৌমেন রায় খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত। পুলিশের ধারণা, এএসআই সৌমেনকে দেওয়া পিস্তল দিয়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ওই পিস্তল জব্দ করা হয়েছে।কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে আসমার মা হাসিনা খাতুন বলেন, আজ সকালে সৌমেন স্ত্রী-সন্তানকে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরে এ হত্যাকাণ্ডের কথা জানতে পারেন তাঁরা। শাকিল বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, তাঁর মেয়ের সঙ্গে শাকিল ফোনে কথা বলতেন।

নিহত আসমার কিশোর ভাই হাসান জানায়, তার বোনের আগে দুটি বিয়ে হয়েছিল। ভাগনে রবিন বোনের দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান। পাঁচ বছর আগে এএসআই সৌমেনের সঙ্গে বোনের বিয়ে হয়।

তিনটি মরদেহ একে একে মর্গের ভেতরে ঢোকানো হচ্ছিল। শেষে যে লাশটি ঢোকানো হয়, সেটি ছয় বছরের শিশু রবিনের লাশ। লাশ দেখে হাউমাউ করে কাঁদছে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর—হাসান। মারা যাওয়া রবিন ওই কিশোরের ভাগনে। ভাগনের নিথর দেহ দেখে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে সে বলছিল, ‘আমার ভাগ্নেক মারলো ক্যা।’

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গের সামনে আজ রোববার বেলা আড়াইটার দিকে হাসান ভাগনের জন্য কাঁদছিল।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে শহরের পিটিআই সড়কের মুখে তিনজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়।নিহত ব্যক্তিরা হলেন আসমা খাতুন, আসমার শিশু ছেলে রবিন ও শাকিল নামের এক যুবক। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পিস্তলসহ আসমার স্বামী সৌমেন রায়কে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত আসমার পরিবার সূত্রে জানা যায়, শাকিলের সঙ্গে আসমার মুঠোফোনে পরিচয় এবং বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।

মর্গের সামনে বসে কাঁদছিলেন নিহত আসমার মা হাসিনা খাতুন ও ভাই হাসান। হাসান পেশায় রিকশাচালক। কথা হলে সে বলে, তার বোনের আগে দুটি বিয়ে হয়েছিল। ভাগনে রবিন বোনের দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান। পাঁচ বছর আগে পুলিশের এএসআই সৌমেনের সঙ্গে বোনের বিয়ে হয়। তার অভিযোগ, সৌমেন কয়েক মাস ধরে তার বোনকে নির্যাতন করতেন।হাসানদের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায়। তবে তারা কুষ্টিয়া শহরের বাবর আলী গেট এলাকায় বাস করে। বোন আসমা ও ভাগনে রবিন তাঁদের সঙ্গে থাকতেন। আজ সকালে সৌমেন তার বোন ও ভাগনেকে বাসা থেকে বাইরে নিয়ে যান। পরে সে জানতে পারে, সৌমেন তার বোন ও ভাগনেকে গুলি করে মেরেছেন।

এএসআই সৌমেনের বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার কসবা গ্রামে।