আম্ফানের তাণ্ডবে পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড, ১২ জনের প্রাণহানি

আম্ফানের তাণ্ডবে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল লণ্ডভণ্ড হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। এই ঝড়ের তাণ্ডবে রাজ্যে অন্তত ১০ থেকে ১২ জনের প্রাণহানির খবর এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই।

তিনি বলেন, ঝড়টি পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। এতে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা ‘ধ্বংস’ হয়ে গেছে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

আজ বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভূমিতে ঢুকে পড়তে শুরু করে এবং সন্ধ্যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়ে আম্পান। কলকাতায় ঘণ্টায় প্রায় ১৩৩ কিলোমিটার বেগে বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া।

এর জেরে লণ্ডভণ্ড হয় কলকাতাসহ দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরেরও হাজার হাজার কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালা ভেঙেছে। ক্ষয়ক্ষতি আরো বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত ঝড়ে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা।

হাওড়ার শালিমারে ঝড়ে উড়ে যাওয়া টিনের আঘাতে মারা গেছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। মিনাখাঁয় মাথায় গাছ পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক নারীর। ওদিকে, বসিরহাটে বাড়ির উঠোনে গাছ ভেঙে পড়ে মারা গেছে ২০ বছরের এক তরুণ।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেছেন, ‘মৃতের সংখ্যাটা এক্ষুন্নি বলা যাচ্ছে না। ১০-১২ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি।’ রাত ৮টার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, এখনো বিপদ কাটেনি বলে সতর্ক করেছেন তিনি।

উপকূলীয় সুন্দরবন, দিঘাসহ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহু এলাকা, মন্দারমণি, শংকরপুর, তাজপুর, কুলপি, কাকদ্বীপ মিনাখাঁ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, হাড়োয়াসহ উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ অংশ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেসে গেছে সড়ক, সেতু, বাড়িঘর।

আম্ফানের প্রভাবে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস বেড়েছে। ঝড়ের দাপট বিকেলের পর থেকে বেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে।

পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় প্রবল বৃষ্টির সঙ্গে ঝড়ের দাপট বাড়ে। দিঘায় সকাল থেকেই সমুদ্র ছিল উত্তাল। প্রবল জলোচ্ছ্বাস হয়েছে। সমুদ্রবাঁধও কিছু জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। উপকূলীয় অনেক জায়গাতেই বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়ে।

বিভিন্ন জায়গা থেকে এখনো ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়েছে অনেক জায়গায়। কলকাতার মানুষ বহুবছর এমন ভয়াবহ ঝড় দেখেনি। শত শত গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে গোটা শহর।

এদিকে আবহাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, ১৫০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে বুধবার বেলা আড়াইটায় পশ্চিমবঙ্গে প্রথম আঘাত হানে আম্ফান। পাশাপাশি আঘাত হানে উপকূলীয় সুন্দরবন, হলদিয়া, দিঘাসহ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বহু এলাকা।