২৪‘র চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে- চবি উপাচার্য

২৪-এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। তিনি আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ আহ্বান জানান।

বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ১০:০০ টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন চবি স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর চবির বিভিন্ন পর্ষদের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

সকাল ১০:৩০ টায় চবি উপাচার্যের নেতৃত্বে চবি স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি শুরু হয়ে চবি প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। সকাল ১০:৪৫ টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।

উপাচার্য উপস্থিত সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, “স্বাধীনতা অর্জন মানে শুধু একটি ভূখণ্ড ও পতাকা পাওয়া নয়, এটি রক্ষা ও সংহত করাও জরুরি। আধিপত্যবাদীরা এখন একটি দেশ দখলের জন্য তার অর্থনীতি ও সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।”

তিনি আরও বলেন, “যে ঐক্য নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, একটি রাজনৈতিক দল সে অর্জনকে লুটপাট ও অত্যাচারের মাধ্যমে ম্লান করে দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমাদের জন্য নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে, যা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে।”

তিনি বলেন, “শুধু পতাকা ও ফুল দিয়ে স্বাধীনতা পালন করা যায় না। স্বাধীনতার চেতনা বজায় রাখতে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর আক্রমণ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব কেন করা হচ্ছে? আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”

তিনি লেখক ও কবিদের উদ্দেশে বলেন, “শুধু একপেশে লেখালেখি করলে চলবে না, সামাজিক দায়বদ্ধতার নিরিখে সবকিছু নিয়েই লিখতে হবে। স্বাধীনতা রক্ষা করতে হলে ঝুঁকি নিতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ২৪-এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বঙ্গ বিজয় থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর গণআন্দোলনে শহিদদের স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “আমরা যখনই কোনো বিজয় অর্জন করি, তখনই একটি কুচক্রী মহল ষড়যন্ত্র করে আমাদের সফলতা নস্যাৎ করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর আমরা একটি সুন্দর পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলাম, কিন্তু তা পাইনি।”

তিনি আরও বলেন, “একাত্তরে আমরা বড় বিজয় অর্জন করেছি। কিন্তু ভারতের কিছু ওয়েবসাইটে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে এখনো ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হয়। ভারত আমাদের সহায়তা করেছিল, তবে এটি যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল, তা স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। আমি ভারত সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যেন তারা এ বিষয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে।”

চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “২৫ মার্চ ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের রাত। তারা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল। পাকিস্তানিরা কখনোই আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকার দেয়নি।”

তিনি আরও বলেন, “২৬ মার্চ প্রতিরোধের দিন। এ কারণে আমরা ২৬ মার্চকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করি। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, তাই এর কৃতিত্ব কোনো একক গোষ্ঠীকে দেওয়া যাবে না।”

তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকার গুম ও খুনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছিল। ২৪-এর গণআন্দোলনের ফলে দেশ ফ্যাসিবাদীদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন চবি বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আল-আমীন, চবি সোহরাওয়ার্দী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মান্নান, চবি পদার্থবিদ্যা বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. রফিকুল ইসলাম, চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, চবি অফিসার সমিতির সভাপতি রশিদুল হায়দার জাবেদ ও চবি কর্মচারী সমিতির সহ-সভাপতি আমির হোসেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ।