সন্দ্বীপের সঙ্গে দীর্ঘ ৫০ বছরেও নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে না ওঠাকে ‘লজ্জার’ বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আজ এই লজ্জা থেকে মুক্ত হলাম।’
এর আগে সকাল ৯টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ফেরিঘাট থেকে দেশের প্রথম সমুদ্রপথের ফেরি ছেড়ে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এক ঘণ্টার মধ্যে দ্বীপে পৌঁছালে হাজারো সন্দ্বীপবাসী ফেরিটিকে স্বাগত জানান।
সমাবেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সন্দ্বীপের মানুষ এতদিন কেন কাদা মাড়িয়ে ডিঙি নৌকা ও বোটে চড়ে পারাপার হবে? সন্দ্বীপ দেশের অন্যতম উপকূলীয় দ্বীপ, অথচ ৫০ বছরেও এখানে নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপন হয়নি—এটা লজ্জার বিষয়। আজ সন্দ্বীপের সঙ্গে নিরাপদ যোগাযোগের নতুন যাত্রা শুরু হলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু সন্দ্বীপ নয়, পুরো চট্টগ্রামের জন্য আজ আনন্দের দিন। স্বাধীনতার মাসে আপনাদের এই সুসংবাদ দিতে পেরে আমি গর্বিত। সন্দ্বীপের এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, সব অঞ্চলের সুষম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে—এটাই প্রত্যাশা।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের কোনো উন্নয়নই সফল হবে না, যদি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি না হয়। ফেরি চালুর আগে নৌঘাট দখলমুক্ত করতে হয়েছে। সমুদ্র উপকূল হওয়ায় এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন ছিল।’
তিনি আরও জানান, সন্দ্বীপের শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকত ও সাইমুন হোসেন মাহিনের নামে দুটি ফেরিঘাট নামকরণের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘এই ফেরি চালুর মূল কৃতিত্ব প্রধান উপদেষ্টার। গত আগস্টে তাকে জানাই, কাদা-মাটি পেরিয়ে সন্দ্বীপের নারীদের পারাপার হতে হয়। তিনি বলেছিলেন, এটা হতে পারে না, সমাধান করতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি দুরূহ প্রকল্প, কারণ বাংলাদেশে সামুদ্রিক ফেরি চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ আমরা সফলভাবে মোকাবিলা করেছি।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন— পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।