রাউজানে সরকারী জলমহল-বালুমহলের ইজারা বন্ধ: অবৈধ দখলে প্রভাবশালীরা

শফিউল আলম, রাউজান: চট্টগ্রামের রাউজানে দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নেই সরকারি জলমহল ও বালুমহলের। এই সুযোগে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বালু উত্তোলন ও জলমহালগুলো প্রভাবশালী মহলের দখলে রয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার কর্ণফুলী নদী, হালদা নদীর রাউজান অংশ, সর্তা খাল, ডাবুয়া খালসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নদী ও খালপাড়ের বিভিন্ন অংশে, ছোট বড় ছড়া খাল থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব।

উপজেলার অর্ধশতাধিক সরকারী দীঘি ও পুকুরে সরকারী ইজারা ছাড়াই চলছে মাছের চাষাবাদ। উপজেলা প্রশাসনের নীরবতায় কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী পরিচয় দিয়ে সরকারী জলমহল ও বালুমহল জবর দখল করে লুটেপুটে খায় । আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো একই ভাবে প্রভাবশালীরা আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাঝনৈতিক দলের নেতা কর্মী পরিচয় দিয়ে করে লুটেপুটে খাচ্ছে ।উপজেলার বিভিন্নস্থানে এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযানে জরিমানা আদায় হলেও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর ফের প্রভাবশালীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি না থাকায়।

উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের চোখকে ফাকি দিয়ে এসব অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারি দেখতে চান স্থানীয় সচেতন মহল। জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন হালদা নদীর মা-মাছসহ জৈববৈচিত্র রক্ষায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালুমহাল ইজারা বন্ধ রাখলেও বিভিন্নস্থানে বালু উত্তোলনের ড্রেজার বসিয়ে নৌযানে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে প্রভাবশালী মহল। এতে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ খ্যাত প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর মা- মাছসহ জৈববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। যার কারণে হালদা নদীতে ৪৫ টির অধিক ডলফিনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মাছের প্রজননও হুমকির মুখে।উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নোয়াজিশপুর ইউনিয়নের ঈশা খাঁ দীঘি, চিকদাইর ইউনিয়নের ছুট্টু খাঁ দীঘি, হলদিয়া ইউনিয়নের বৃক্ষবানুপুর দিঘি, কদলপুর ইউনিয়নের লস্কর উজির দীঘি, পাহাড়তলী ইউনিয়নের মহামুনি দীঘি, পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের মগদাই জলপাইন্যা দীঘি, পুর্ব গুজরা ইউনিয়নের মহাজন দীঘি, রাউজান উপজেলা সদরের নল পুকুর, রাউজান উপজেলা পরিষদের সামনে উপজেলা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পুকুর সহ সরকারী মালিকানাধীন পুকুর জলাশয়গুলো একসময় নিয়মিতভাবে ইজারা দেওয়া হতো। সরকারী জলমহল দীঘি ও পুকুর ইজারা বাবদ সরকারী কোষাগারে জমা হতো কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।

জানা যায়, গত আওয়ামী লীগ সরকার আমল থেকে সরকারী মালিকানাধীন দীঘি ও জলাশয় ইজারা বিহীন রয়েছে। এই সুযোগে ইজারা না নিয়ে সরকারী দীঘি ও পুকুরের মধ্যে মাছ চাষ করে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিপুল টাকা অবৈধভাবে আয় করলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আয়। অপর দিকে রাউজানের হালদা নদী, সর্তার খাল, ডাবুয়া খাল, বেরুলিয়া খাল, কাঁশখালী খাল, কলমপতি খাল, মুখছড়ি খাল, রাউজান খাল, ভোমর ঢালা খাল, মঙ্গলছড়ি খাল, হরানাথ ছড়া খাল, ফটিকছড়ি খাল, ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়া, কর্ণফুলী নদীতে বালু মহল ইজারা দেওয়া হতো। বালু মহল ইজারা দিয়ে সরকার বিপুল রাজস্ব আয় করতো। কর্ণফুলী নদীর রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া, বাগোয়ান ইউনিয়নের পাচঁখাইন, লাম্বুর হাট, খেলার ঘাট এলাকায় বালু মহল ইজারা না নিয়ে প্রতিদিন ড্রেজার দিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের একটি সিন্ডিকেট। বিগত কয়েক বছর ধরে হালদা নদীতে বালু মহল ইজারা কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও হালদা নদীর রাউজান উপজেলা, হাটহাজারী, নগরীর মোহরা অংশের বিভিন্ন স্পটে প্রতিদিন ড্রেজার ও পাওয়ার পাম্প বসিয়ে কোটি কোটি টাকার বালু উত্তোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল। আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে ও সরকারী জলমহল ও বালুমহল নতুন করে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী পরিচয়ে জবর দখল করে লুটেপাটে খাচ্ছে প্রভাবশালীরা ।

এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সহকারী কমিশনার অংছিং মারমা বলেন, প্রতিনিয়ত অভিযান চলছে । অভিযান চালিয়ে সর্তা খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বালু ভর্তি জীপ আটক করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে । ডাবুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ডাবুয়ায় সর্তা খালের বেড়িবাধ সংগ্লন্ন কৃষি জমি থেকে গভীর ভাবে মাটি খনন করায় পৃথক পৃথক ভাবে অভিযান চালিয়ে দু মাটিখোকোর কাছ থেকে ১লাখ ৫০ হ্জাার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে । মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত এসকেভেটোর জব্দ করা হয়েছে । নদী ও খালের বালু মহল ইজারা দেয় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে নদী খালের বালু মহল ইজারা দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দিলে ও বালু মহল ইজারা না নিয়ে অবৈধভাবে নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা ।
সরকারী দীঘি ও পুকুরগুলোর কোন ইজারা নেই। সরকারী দীঘি, পুকুর ও বালু মহল ইজারার আওতায় আনার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রাউজান উপজেলা প্রশাসন ।