আগ্রাবাদ ঢেবার পাড়ে ওয়াকওয়ে করতে চান মেয়র ডা. শাহাদাত

নগরীর আগ্রাবাদের ঢেবার পাড়ে নাগরিকদের সুস্থ বিনোদনের সুযোগ গড়তে ওয়াকওয়েসহ উন্মুক্ত স্থান করার মাধ্যমে ঢেবাটিকে দখলদারদের হাত থেকে বাঁচাতে চান চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

মঙ্গলবার(১১ মার্চ) এ লক্ষ্যে টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থার সাথে সভা করেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. সুবক্তগীন, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামসহ সেবা সংস্থাসমুহের উর্ধ্বতন কর্মকতাবৃন্দ।

সভায় মেয়র বলেন, আগ্রাবাদ ঢেবা হতে পারে নাগরিকদের চিত্ত-বিনোদনের স্থান। নগরীতে মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে এমন উন্মুক্ত স্থান কম। ঢেবার পাড়টিকে যদি আমরা সৌন্দর্যবর্ধন করে ওয়াকওয়ে আর বসার স্থান করে দিতে পারি তাহলে মানুষ সেখানে হাটতে পারবে, অবসরে সময় কাটাতে পারবে।এখন যেহেতু সংস্থাগুলোর মধ্যে আগের মত দ্বন্দ নেই, সবাই আমাকে সহযোগিতা করছেন সেহেতু এ সুযোগে নাগরিকদের জন্য আমি আগ্রাবাদ ঢেবার পাড়ে ওয়াকওয়ে করার মাধ্যমে ঢেবাটিকে আমি রক্ষা করতে চাই। অন্যথায় একদিন এই ঢেবাটি দখলদারদের করালগ্রাসে হারিয়ে যাবে।

এসময় সভায় ঢেবার ভূমির মালিকানার বিষয়ে বন্দর ও রেলওয়ের মধ্যে মতভিন্নতা আছে বলে উঠে আসে। এ প্রেক্ষাপটে মেয়র বলেন, আমি চিরকাল মেয়র থাকবনা। আপনারাও যারা বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বে আছেন তারাও আজীবন সংস্থার দায়িত্বে থাকবেননা। তাই, আমাদের নাগরিকদের প্রয়োজনে উদার হতে হবে। আসুন আমরা সবগুলো সংস্থা মিলে অবহেলিত এ জায়গাটিতে নাগরিকদের সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করে দেই।

মেয়রের প্রস্তাবে সায় দিয়ে উপস্থিত বিভিন্ন সেবা সংস্থার শীর্ষ কর্তাবৃন্দ আগামী সপ্তাহে ঢেবার পাড় এলাকা পরিদর্শন করে সবগুলো সংস্থা সম্মিলিতভাবে সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের সম্ভাবতা যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেন।

সভায় অস্ট্রেলিয়ায় ড্রেনেজ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ড. আবদুল্লাহ আল মামুন এবং পরিবেশকর্মী শাহরিয়ার খালেদ নগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে প্রাধিকার ভিত্তিতে জরুরি করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরের অন্যতম বড় সমস্যা। এই সমস্যা দীর্ঘদিনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামের ৭১টি খালের মধ্যে বর্তমানে ৫৭টির অস্তিত্ব রয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩৬টি খালে কাজ চলছে। বাকি ২১টি খালের উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি, যা নগরের বাসিন্দাদের জন্য বড় অসুবিধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিডিএ যে ৩৬ টি খাল খননে কাজ করছে সে প্রকল্পটি চসিকে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে এ কাজটি সিডিএ’কে দেয়ায় নগরবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পর আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছি। চট্টগ্রামকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে হলে বাকী ২১টি খালও খনন করতে হবে।

ড. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসণে অনেকগুলো প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে, প্রকল্পগুলো ব্যর্থ হয়ে যাবে যদিনা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের পর সঠিকভাবে পরিচালনা ও মেইনটেনেন্স এ জোর দেয়া না হয়। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনে বৃষ্টি ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ডাটাভিত্তিক সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। চসিকের উচিত এজন্য একটি স্বতন্ত্র আইটি সেল করা যাদের কাজ থাকবে বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এগুলো নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত অনলাইন প্লাটফর্ম পরিচালনা করবে। এ প্লাটফর্ম থেকে যে কেউ বাড়ি করার আগে আগামী ১০০ বছরে অত্র এলাকার জলসীমা সম্পর্কে জানতে পারবে। শুধু প্রকল্প না করে অটোমেশন এবং প্রকল্প সচল রাখতে দক্ষ জনবল গড়ার বিষয়েও মনোযোগ দিতে হবে। এ বিষয়ে অন্যান্য সংস্থাগুলোর সাথে চসিককে একসাথে কাজ করতে হবে।

“নগরীর স্লুইসগেটগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা প্রয়োজন। খাল খননের পাশাপাশি নদীতে জলপ্রবাহ ঠিক রাখতে সিলট্র্যাপ নির্মাণ প্রয়োজন। ভাসমান ডেব্রিস কালেক্টর ব্যবহার করে স্রোতে ভাসমান পলিথিন-প্লাস্টিক যদি আটকে ফেলা যায় তাহলে জলস্রোত ঠিক থাকবে, যা জলাবদ্ধতা কমাবে। আগামী বর্ষা আসার আগেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে খনন করলে জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।”

সভায় নগরীতে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে এবং জলাবদ্ধতা হ্রাসে বিভিন্ন মতামত উঠে আসে।