কিসের সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরু, এই দেশে যে জন্ম নিছে সেই এ দেশের গর্বিত নাগরিক: জামায়াত আমীর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান যুবক ও তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘আগামী দিনের বৈষম্যহীন, দুর্নীতি-দুঃশাসন মুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য তোমাদের আরেকবার গর্জে উঠতে হবে, জেগে উঠতে হবে। আমরা যদি এমন একটি বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারি দেশে কিংবা প্রবাসে বলতে পারি। আমরা গর্বিত, আমরা বাংলাদেশের নাগরিক।’

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টার সময় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পঞ্চগড় জেলা শাখার আয়োজনে জনসভায় উপস্থিত হয়ে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে যত ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো অনুসন্ধান করে তার শ্বেতপত্র বাংলাদেশের জনগণের সামনে প্রকাশ করে দেয়ার দাবিও জানান তিনি।

এর আগে এক সনাতন ধর্মের নেতার বক্তব্য শুনে তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সকল মানুষ আমরা মিলেমিশে থাকতে চাই, চলতে চাই। এর মাঝেই আমাদের গর্ব- সৌন্দর্য, এর মাঝেই আমাদের শান্তি। কিসের সংখ্যালঘু আর কিসের সংখ্যাগুরু। এই দেশে যে জন্ম নিছে সেই এ দেশের গর্বিত নাগরিক। আমরা নাগরিকদেরকে কোনো দলের বা ধর্মের ভাগবাটোয়ারা করার পক্ষে নই। এই বদ হাসলত ছিল অতীতের পতিত স্বৈরাচারের। তারা এই জাতিকে টুকরা টুকরা করে মুখামুখি লাগিয়ে রেখেছিল। যে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে না। সে দেশের মানুষ, মাথা সোজা করে বিশ্বের দরবারে দাঁড়াতেও পারে না।’

আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর হয়ে গেলো, আর কত বছর? এরকম আমাদের টুকরা টুকরা করে রাখা হবে। আমাদের স্পষ্ট ঘোষণা আমরা কোন মেজরিটি ও মারনোরিটি মানি না। আমরা সবাই মিলে ইউনিটি। একটাই জাতি আমরা। আমাদের পরিচয় আমরা বাংলাদেশি। হ্যাঁ, তার পরেও আমাদের একটা পরিচয় থাকবে। কেউ মুসলমান, কেউ হিন্দু, কেউ বৌদ্ধ ও কেউবা খ্রিস্টান। আমরা সবাইকে নিয়ে চলার পক্ষে। এটা সত্য, কেউ যেন কারো ধর্মকে নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করেন। বিশেষ করে আমরা মুসলমান ভাইদের বলবো আপনারা অন্য ধর্মের ভাই বোনদের কষ্ট দিবেন না। এটাকে আমরা ঘৃণা করি। আমরা সবাই এক হয়ে থাকতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারতসহ সকল দেশ আমরা একি বিশ্ব সভার সদস্য। জাতিসংঘের সদস্য আমরা সবাই। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। আমরা অহেতুক আমাদের প্রতিবেশীদের কষ্ট দিতে চাই না। তবে আমাদের প্রতিবেশীরা এমন কিছু আমাদের ওপর চাপিয়ে না দেন, যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অপমানজনক হয়। এরকম কিছু যদি তারা করে, দেশের স্বার্থে ভূমিকা পালন করতে সেদিন আমরা কারো চোখের দিকে তাকাবো না। বিবেকের দিকে তাকিয়ে বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে আমরা আমাদের দায়বদ্ধতা পালন করতে বাধ্য হব।’

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘পঞ্চগড়ের ন্যায্য অনেকগুলো দাবি এখনও তোলা হয়েছে। তবে সবগুলোর পক্ষে থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আমার কথা রয়েছে। যেহেতু পঞ্চগড় একটি কৃষিপ্রধান জেলা তাই, কৃষি বিদ্যালয় গড়ে উঠলে শিক্ষার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। উচ্চ শিক্ষা নিয়ে বেকারের মালা গলায় না নিয়ে কৃষিতে শিক্ষা নেয়া ভালো। কারণ একজন কৃষিবিদের এক সেকেন্ড বসে থাকার সুযোগ নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমিও আপনাদের মতো একজন সাধারণ মানুষ। তবে আমার একটা গলা আল্লাহ দিয়েছে। যে দাবিটাকে আমি যুক্তিসম্মত মনে করি তার পক্ষেই আমি চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করি। আপনাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। তবে এই সরকার আপনাদের দাবি এই সরকার কতটা পালন করতে পারবে আল্লাহ ভালো জানে। কিন্তু আপনাদের কথা দিচ্ছি। এ দেশের ইসলাম প্রিয় জনগণের নেতৃত্বে যদি সরকার গঠন হয়। তাহলে আপনাদের দাবি হবে আমার দাবি। তখন দাবি আর উত্থাপন করতে হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে একটা মানবিক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমরা আর গডফাদার ও মাদারদের বাংলাদেশ দেখতে চাই না। মাফিয়াতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের বাংলাদেশ দেখতে চাই না। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফ্যাসিবাদীদের হাতে যারা প্রাণ দিয়েছেন আমি তাদের সকলের প্রতি গভীর ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’

পরে তিনি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে ন্যায় ও ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষে সকলকে জামায়াতে ইসলামীর পাশে থাকার আহ্বান জানান জামায়াতে আমির।

এসময় পঞ্চগড় জেলা আমির অধ্যাপক মাওলানা ইকবাল হোসাইনের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিধি সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীসহ জামাত-ছাত্র শিবিরের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন।