মির্জা ইমতিয়াজ শাওন, প্রিয় চট্টগ্রাম : বাঁশখালী উপজেলায় উপকূল জুড়ে চলছে লবণ উত্পাদন। বাঁশখালী উপকূলে হাজার হাজার একর জমিতে হয়েছে লবণ চাষ, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে দেখা মেলে লবণের স্তুপ। এ কাজের মধ্য দিয়ে চলে বাঁশখালীর বহু মানুষের জীবন জীবিকা। কিন্ত সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ চাষীদের।
বাঁশখালী উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় লবণ চাষ হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, লবণ মাঠে পুরোদমে কাজ করেছে চাষিরা। লবণ মাঠ পরিচর্যা শেষে ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে। দুই ধরণের পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন হয়। একটি হলো-সনাতন পদ্ধতিতে কালো লবণ দ্বিতীয়টি পলিথিন পদ্ধতিতে সাদা লবণ। তবে পলিথিনের লবণগুলোকে চাষিরা সাদা সোনাও বলে থাকে। ফলশ্রুতিতে পলিথিন-যুক্ত লবণ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে বেশিরভাগ চাষিরা। আবহাওয়ার পরিবেশ অনুকূলে থাকলে লবণের বাম্পার ফলের আশাবাদী চাষিরা। তবে পুরোদমে চাষিরা লবণ উৎপাদন করেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশায় ভুগছেন চাষিরা।
উল্লেখ্য যে, এই বছর বাঁশখালী উপজেলার সরল, গণ্ডামারা, শেখেরখীল, পুইছড়ি, ছনুয়া, কাথরিয়া, খানখানাবাদ ও বাহারছড়া ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকার ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে লবণ চাষ করা হয়। চাষিরা নিজেদের জমি, বা লিজ নিয়ে এই লবণ চাষ করে। অনেকে আবার জমি মালিকের সঙ্গে ভাগাভাগিতে চাষ করে।
মো: আরিফুল ইসলাম জানায়, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রায় পানির দরেই লবণ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সিন্ডিকেট করে মধ্যস্বত্বভোগীরা লবণের দাম কমিয়ে দেওয়ায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত উপকূলের আমার মত প্রান্তিক চাষিদের বহু ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এখন লবণের মণ ১৫০-২০০ টাকা, এর ভেতর লবণ শ্রমিক এবং দালাল বাবদ ৫০ টাকা করে খরচ দিতে হয়, টিকে ১০০-১৫০ টাকা। ন্যায্য মূল্যে না পাওয়ায় মাঠে গর্ত করে রাখা লবণ নিয়ে চিন্তায় আছেন। ব্যবসায়ীরা যে দামে কিনতে চাচ্ছে, সে দামে বিক্রি করলে ধোলাই খরচও পাবেন না বলে জানায় তিনি।
‘লবণ শিল্প নিয়ে আন্দোলনে যুক্ত ছাত্রনেতা হাসান মোহাম্মদ জুনায়েদ রাসেল বলেন, বাঁশখালীতে এইবার ঈদে ৩৫ হাজার লবণচাষী ঈদ করতে পারেন নাই। ‘মিল মালিকরা শুভঙ্কর ফাঁকি দিয়ে মূলত চাষিদেরকে নিরুৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেন লবণ শিল্পটা উঠে যায় এই অপচেষ্টা করছে। যাতে লবণ আমদানি নির্ভরশীল হয়ে যায় মিলের মালিকরা সিন্ডিকেট করে এই ঘটনা ঘটাচ্ছে। যে লবণের উৎপাদন খরচ পড়েছে কেজি প্রতি ১৫ টাকা সেই লবণে বিক্রয়মূল্য এখন কেজি প্রতি ৫টাকা। এমন অবস্থায় লবণচাষীদের বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এমনভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশের হোয়াইট গোল্ড খ্যাত লবণ শিল্পও পাট শিল্পের মতো বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সরকার চাইলে সবই সম্ভব। প্রান্তিক পর্যায়ে লবণ শিল্পকে গুরুত্ব দিয়ে প্রদক্ষেপ নিলে একদিন এই লবণ শিল্প বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়ক হিসাবে ভূমিকা রাখবে।
এদিকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্রুকুটির শিল্প (বিসিক) বলছে, দেশে চলতি বছর যার পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৩৫৭ একর। সেই হিসেবে চাষের জমি বেড়েছে ২ হাজার ৮১ একর। এছাড়া চলতি বছর আবাদযোগ্য জমিতে মোট ৪০ হাজার ৬৯৫ জন কৃষক লবণ চাষ করছেন, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ২২৮ জন বেশি।
লবণের সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কমেছে। তবে চাষিদের একসঙ্গে সব লবণ বিক্রি না করে ধাপে ধাপে বিক্রি পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
মূলত উপকূলের বহু অধিবাসীর জীবিকা নির্বাহ করে লবণ চাষের উপর। উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য ও সঠিক দাম থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেজন্য সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে বোদ্ধা মহল মনে করে।