গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর চট্টগ্রামের রাউজানসহ বিভিন্ন জনপদে প্রায় প্রতিদিনই ঝরছে রক্ত। কোন কোন উপজেলায় বিএনপির দলাদলি চরমে।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শনিবার (২৬ এপ্রিল) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে নগরের কাজীর দেউড়ির নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য এবং সাবেক সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রদূত গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘৫ আগস্টের পরে রাউজানে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন উপজেলায় ঘটছে হানাহানির ঘটনা। আমি মনে করি, এসব ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এসব ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ মহলের স্বার্থ। আপনারা যদি শুরু থেকে তালাশ করেন মূলত ১৯৮৫ সালের পর থেকে ফারুক হত্যার মাধ্যমে হত্যার ঘটনা শুরু হয় রাউজানে। এ পর্যন্ত শতাধিক ছাত্র যুবককে প্রাণ দিতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এনডিপি’র সন্ত্রাসীরা এসব হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিল। বর্তমানে রাউজান আবার রক্তাক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। কি কারণে কারা এসব খুন-খারাবির ঘটনা ঘটাচ্ছে তা অনেকের কাছে অস্পষ্ট।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘নতুনভাবে ৫ আগস্ট পট পরির্বতনের পরে আবার সেই হত্যাকাণ্ডগুলো শুরু হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ হচ্ছে মাটিকাটা, খালের বৈধ-অবৈধ বালুমহল দখল, দখলের দ্বন্দ্ব, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, চাঁদাবাজি, সরকারের বিভিন্ন প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঠিকাদারদের থেকে কমিশন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত সন্ত্রাসীরা এই হত্যাকাণ্ডগুলো করে আসছে। এ ঘটনাগুলো যারা ঘটাচ্ছে এবং যারা এসব ঘটনার শিকার হচ্ছেন, তাদের পূর্বের পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি বর্তমানে তারা কাদের ছত্রছায়ায় তা অনুসন্ধান করা হলে সবকিছু সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।’
গোলাম আকবর খোন্দকার আরও বলেন, ‘বিগত কয়েক মাসে রাউজানে বিভিন্ন অস্ত্র-শস্ত্র কেনা হয়েছে। এটা অনেকেই জানেন, হয়তো প্রশাসনও জানেন। সুতরাং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে আড়াল করার জন্য রাজনীতির ছত্রছায়া ব্যবহার করছে। আমাদের দলের মধ্যে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। আমাদের নামে অসংখ্য মামলা। আমি জীবনে কাউকে একটা ঢিল মারিনি। আমাকে রাজপথের মিছিল থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। বেশ কিছুদিন আমি কারাগারে ছিলাম। শুধু আমি না, আমাদের অনেক নেতাকর্মীর নামে মামলা আছে। কিন্তু সেই সুবাদে এখন কেউ যদি অপরাধ করে বিএনপির নেতাকর্মীদের পাশে বসে থাকে তাহলে আমাদেরকে ফাইন্ডআউট করা উচিত। সেটাকে যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া উচিত বলে মনে করি।’
রাউজানের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পরই দেখা যায়, কাদের নামে মামলা দিলে চাঁদা আদায় করা যাবে—এ ধরনের তোড়জোড় শুরু হয়। কোনো সন্ত্রাসী দলের নেতাকর্মী হতে পারে না। কারণ প্রকৃত নেতা সন্ত্রাসী হতে পারে না। রাউজানের সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে দেখেছি, হত্যাকাণ্ডের পর কাকে কাকে আসামি করা হবে সে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। কারণ কাকে কাকে আসামি করলে তার থেকে চাঁদা আদায় করা যাবে।’
গোলাম আকবর খোন্দকার রাউজানসহ চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিভিন্ন জনপদের অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর টহল ও অভিযান এবং অস্ত্র উদ্ধারের দাবির পাশাপাশি যথাযথ অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরির জন্য সাংবাদিকদের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস চৌধুরী, কাজী সালাউদ্দিন, মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ নুর মোহাম্মদ, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, ফটিকছড়ি পূর্ব জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) আজিজুল্লাহ বাহার, রাউজান উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি কুতুব উদ্দিন বাহার, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত, সন্দ্বীপ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এম এ তাহের, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আউয়াল চৌধুরী ও সদস্য সচিব আজিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ জসিম, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচএম নুরুল হুদা, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি জিএম মোর্শেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীরা।