চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) কমিশন আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে তারা সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নির্বাচনী পরিবেশ ও সাম্প্রতিক পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় কমিশন এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে বলে জানানো হয়।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিগত ১৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে গঠিত নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল। তারা ইতোমধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা, ব্যালট পেপার ছাপানো এবং নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। তবে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর কারণে কমিশনের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা চরম প্রতিকূলতার মুখে পড়েছে।
আজ আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবিতে একটি আবেদন জমা দিয়েছে। একই দিনে ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করে যে, সমন্বয় পরিষদ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সমর্থক আইনজীবীদের মনোনয়ন বাতিলের জন্য ষড়যন্ত্র করছে। উভয় আবেদনই সমিতির গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী বলে নির্বাচন কমিশন উল্লেখ করেছে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি, হেনস্তা ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। আইনজীবী সমিতির ঐতিহ্য ও ভ্রাতৃত্ববোধ ক্ষুণ্ণ হওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনের পরিবেশও চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে। এসব কারণেই কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের প্রধান অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মান স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার পরিবেশ পাচ্ছে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে কিনা, নির্বাচন স্থগিত করা হবে, নাকি কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, তা নিয়ে এখন সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের ঘোষণার পর আইনজীবী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ দাবি করছে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা জরুরি, অন্য পক্ষ বলছে, নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মনোনয়ন বাতিলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।
অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, আইনজীবীদের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি নষ্ট হলে তার প্রভাব শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, পুরো সমিতির কার্যক্রমেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।