গণতন্ত্র ফেরাতে বিভেদ নয় ঐক্যের আহ্বান

গণতন্ত্র ফেরাতে বিভেদ নয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারবো না।

গতকাল রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মিথ্যা মামলার শুনানিকালে আদালতে দেয়া তার জবানবন্দির ওপর রচিত ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘দ্যা প্যাট্রিয়ট’ প্রকাশনা সংস্থার ৩ শ’ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মূল্য রাখা হয়েছে ২ শ’ টাকা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যেন বিভক্তির রাজনীতি না করি। এখন যেটা প্রয়োজন দেশকে বাঁচানোর জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার জন্য আমাদের প্রয়োজন ঐক্য। সংস্কার অবশ্যই লাগবে কিন্তু সেই সংস্কারটা হচ্ছে যে, এর পেছনে যে শক্তিটা লাগবে সেটা হচ্ছে যে, নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার। এটা ছাড়া সংস্কারকে কখনো বৈধতা দিতে পারবো না আমরা। এটা ফ্যাসিস্টরা পারবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা আহ্বান জানাবো, দেশের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদের, স্বাধীনতাকামী মানুষদেরকে যে, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, বিভাজিত হবেন না। আমি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যারা যে যেখানে কাজ করছেন সবাইকে অনুরোধ করবো বিভাজন সৃষ্টি করবেন না। আমি জানি না, কিছু মানুষ একেবারে যেন ডেসপারেট হয়ে গেছে যে, তারা দেশকে ভাগ করে ফেলবে, জনগণকে বিভক্ত করবে এবং বিভিন্ন রকম কথা বলছে, বিভিন্ন রকম উস্কানিমূলক কথা বলছে, আপনারা দয়া করে ওগুলোর মধ্যে যাবেন না।

আদালতে বেগম খালেদা জিয়া যেসব জবানবন্দি দিয়েছেন তাকে গ্রন্থে রূপ দিতে নেপথ্যে বিএনপি’র আইনজীবী এডভোকেট আবদুর রেজ্জাক খান এবং সাংবাদিক শফিক রেহমান ও খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব সাংবাদিক মারুফ কামাল খানের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথাও স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল।

মির্জা ফখরুল বলেন, কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি সব মামলা থেকে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব মুক্ত হবেন। তিনিও আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন ইনশাআল্লাহ। আমাদের যে ত্যাগ, আমাদের জনগণের, আমাদের যুবকদের, আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের, আমাদের ছাত্রদের, আমাদের মহিলাদের, এটা কোনো মতেই বৃথা যাবে না, বৃথা যায়নি। আমরা অন্তত ফ্যাসিবাদকে সরাতে পেরেছি, ওদেরকে তাড়াতে পেরেছি।

তিনি বলেন, হাসিনা পালানোর পর থেকে আমরা কেন জানি নিজেদের মধ্যে পুরো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না, ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। দেখুন না কি একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আরে ক্ষমতায় তো টিকে থাকবে তখনই যখন তুমি এটাকে স্যাটেল করতে পারবে, তার জন্য আমরা বার বার বলছি- সংস্কার। এই সংস্কার তো আমরাই শুরু করেছি, প্রথম সংস্কারের কথা বলেছি। জিয়াউর রহমান সাহেব প্রথম সংস্কার করেছেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন।

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার লন্ডনে যেতে রাজকীয় বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য কাতারের আমীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলেন এবং গেলেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিয়ে। তাকে সিঅফ করেছে, পথে পথে লাখ লাখ মানুষ বিদায় জানিয়েছে এবং তিনি আন্তর্জাতিকভাবে যে সম্মানটুকু পেয়েছেন, কোথাও বাধা পেতে হয়নি আমাদেরকে, আমরা সেখানেই বলেছি, আমাদের এই ভিসা দরকার- সঙ্গে সঙ্গে করে দিয়েছে।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ম্যাডামের প্রতি সম্মানস্বরূপ কাতারের আমীর যে বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স পাঠিয়েছেন সেজন্য আমীরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি ধন্যবাদ জানাই বৃটিশ সরকারকে তারা সেখানে তার লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন এবং সেখানে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবসহ যারা আছেন তারা সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করতে পেরেছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ’র সভাপতিত্বে ও কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সভায় সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মাহমুদা হাবিবা, বিগত সরকারের আমলে নানাভাবে নির্যাতিত অ্যাক্টিভিস্ট হুমায়ুন কবীর, রেজাউর রহমান, ফসিউল আলম, কাজল রহমান, শিপন মোল্লা, ওয়াসিম ইফতেখারুল হক, আবদুর রহমান নূর রাজন, রেজওয়ানুল হক শোভন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।