সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডে বিশেষ মহান চক্রান্ত থাকতে পারে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আবারো আন্দোলনে নামার আহ্বান জানালেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) কক্সবাজার হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রাক্তনদের পুনর্মিলনীতে ধর্ম উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা এই দেশে আর কোন ফ্যাসিবাদ দেখতে চাই না। আওয়ামী লীগের আমলের প্রতিটি সেক্টর ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কোটি কোটি টাকা লুট করেছে তারা। বিদেশে বাড়ি গাড়ি করেছে। অথচ দেশের কোন আলেমের ব্যাপারে এরকম নজির কেউ দেখাতে পারবে না। আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য থাকলেও মৌলিক জায়গায় সবাই ঐক্যবদ্ধ।
তিনি আরো বলেন, প্রতিটি বিষয়কে আমরা সতর্কতার সাথে মোকাবেলা করছি। আপনাদেরকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে আবারো রাজপথে নামতে হবে বলে মন্তব্য করেন ধর্ম উপদেষ্টা।
যারা কুরআনের আদর্শ লালন করে তার একদিন রাষ্ট্র গঠন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ধর্ম উপদেষ্টা।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের মধ্যখানে আমরা নির্বাচনের পথে যাচ্ছি। জানুয়ারীর ১ তারিখ থেকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হবে। আমাদের সরকার ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে চায় না। রাতের আঁধারে না, দিনের আলোতে ভোট হবে। মানুষ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেবে। নির্বাচনে যারাই বিজয়ী হবেন তাদের আমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করব।
“জুলাই-আগস্টে বিপ্লব প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, “ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে এক হাজার মানুষ শহীদ হয়েছে। আহত হয়েছে অসংখ্যা মানুষ। আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে। এখনো মানুষ মারা যাচ্ছে। এই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া হবে না। আমরা যদি মনে করি আমাদের আন্দোলন শেষ, তবে ভুল হবে। আমাদের কাজ এখনো বাকি। যদি প্রয়োজন পড়ে আবারও মাঠে নামতে হবে।”
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর একেকটা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি। দুষ্কৃতকারীরা কখনো সচিবালয় ঘেরাও, কখনো মাজার ভাঙে, কখনো মন্দিরে হামলা চালায়, কখনো গাজীপুরে গার্মেন্টস কারখানায় আগুন দেয়, কখনো পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতা সৃষ্টি করে, লামায় খ্রিস্টানদের বাড়িতে আগুন এবং কয়দিন আগে সচিবালয়ে আগুন দিয়েছে। সবকিছু একই সূত্রে গাঁথা। নাশকতা যারা করে তারা জাতির দুশমন। আমাদের আরও চ্যালেঞ্জ আছে। প্রতিটি চ্যালেঞ্জ আমরা সচেতনতার সাথে মোকাবেলা করছি। প্রয়োজনে আবারও রাজপথে নামতে হবে। আমরা আর ফ্যাসিবাদ দেখতে চায় না। বহু প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গেছে। হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। কোন আলেম দেশের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেনি, বাড়ি করেনি। আলেম-ওলামারা জনগণের কাছে যান। তাদের সুখ-দুঃখে শরীক হোন। ইনশাআল্লাহ একদিন কোরআনের আদর্শে উজ্জীবিত মানুষরাই রাষ্ট্র গঠন করবে।”
তিনি বলেন, “মুসলিম জাতি আজ বহুভাবে বিভক্ত। আমাদের এই মুহুর্তে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ঐক্য, মুসলমানদের ঐক্য। মুসলমানরা যতোদিন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন, পৃথিবীতে রাজত্ব করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু যখন থেকে আমরা বিবেধ, সংঘাত ও পারস্পরিক কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়িতে লিপ্ত হয়েছি, আমাদের শক্তি ক্ষয় হয়ে গেছে। আমাদের পতন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বর্তর্মানে রক্ত ঝরে আরাকানে, সিরিয়ায় ও ফিলিস্তিনে। বাংলাদেশেও রক্ত ঝরছে। কোরআনের শাসন প্রতিষ্ঠার যারা স্বপ্ন দেখি, তারা কাছাকাছি আসতে পারলেই বাতিল শক্তি মাথা নত করতে বাধ্য হবে। এছাড়া ওআইসি ও আরবলীগ কে কার্যকর করা গেলে, পৃথিবী নতুন পথে চলতে বাধ্য হবে।
‘রিইউনিয়ন হাশেমিয়ান-২০২৪’ এর আহ্বায়ক মাওলানা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান ও জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘রিইউনিয়ন হাশেমিয়ান-২০২৪’ এর সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম হাসান।
ইসলামিয়া মহিলা কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরিদুল আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রাক্তনরা স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন।
হাশেমিয়ানদের প্রাক্তনদের রি-ইউনিয়নে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মুসলিম সমাজ আজ বহুধাবিভক্ত। আমাদের এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন ঐক্য। মুসলমানদের ঐক্য, বাংলাদেশি জাতি-গোষ্ঠীর ঐক্য। মুসলমানেরা যতদিন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন ততদিন তারা পৃথিবীতে রাজত্ব করে গেছে। যেই মুহূর্ত হতে আমরা বিভেদ, সংঘাত ও পারস্পরিক কাঁদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হয়ে গেছি সেই মুহূর্ত হতে আমাদের শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করেছে। আমাদের পতন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তিনি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে সকল ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একতাবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
উপদেষ্টা আরও বলেন, সারা পৃথিবী আজ সংঘাত-বিক্ষুব্ধ। মুসলমানদের রক্ত ঝরছে। জেরুজালেম, আরাকান, সিরিয়া ও লেবাননে মুসলমানদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এই মুহূর্তে ঐক্যই আমাদের একমাত্র শক্তি। এই শক্তিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সকল মতভেদকে ভুলে গিয়ে আমাদেরকে কাছাকাছি আসতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এদেশের আলেমসমাজ যদি কাছাকাছি আসতে পারতেন তাহলে নতুন ইতিহাস রচিত হতে পারতো। অতীতে আমরা বারবার বিভেদে জড়িয়েছি। এই অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথ রচনা করতে হবে।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মুসলমানদের অনৈক্যের কারণেই বাগদাদ ধ্বংস হয়েছে, হালাকু খান বাগদাদ দখল করতে পেরেছিল। পৃথিবীতে এখনও প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান। মুসলমানেরা যদি এক হতে পারে, ওআইসি এবং আরব লীগকে যদি শক্তিশালী ও কার্যকর করা যায় তাহলে পৃথিবী নতুন পথে চলবে।
জুলাই বিপ্লবে আহতদের দুর্বিষহ অবস্থার কথা উল্লেখ করে ড. খালিদ বলেন, আমরা যদি মনে করি আমাদের আন্দোলন-বিপ্লব শেষ, তাহলে ভুল হবে। আমাদের কাজ এখনও অনেক বাকি। যদি প্রয়োজন পড়ে আমাদেরকে আবারও মাঠে নামতে হবে। তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে সোচ্চার থাকার অনুরোধ জানান।
ড. খালিদ আরও বলেন, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। সরকার পথযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু সরকার সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টা তাঁর কর্মকালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।
দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য এই আয়োজন ঘিরে হাশেমিয়ার প্রাক্তন ছাত্রদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মাদ্রাসা ক্যাম্পাস।
এসময় বিভিন্ন পদস্থ কর্মকর্তা ও হাশেমিয়া কামিল মাদরাসার প্রায় দেড় হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।