মহামুনি এংলো পালি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা

শফিউল আলম, রাউজানঃ ‘বন্ধুত্বের বন্ধনে, এসো মিলি প্রাণের টানে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়েছে রাউজান উপজেলার শতবর্ষোত্তীর্ণা ঐতিহাসিক বিদ্যাপীঠ মহামুনি এংলো পালি উচ্চ বিদ্যালয়ের এস.এস.সি ১৯৯৪ ব্যাচের পুনর্মিলনী।

গত শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দিমব্যাপী বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, বন্ধুের স্মৃতিচারণ, গুরুদক্ষিণা, স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, পরলোকগত শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ ও প্রিয় সহপাঠীদের স্মরণ, বিভিন্ন ইভেন্টেট ক্রীড়া প্রতিযাগীতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, র‌্যাফল ড্র, ভোজন উৎসবসহ নানা আয়োজনে আনন্দঘন পরিবেশে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হয়।

এইদিন ঊষার রঙ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই শিক্ষার্থী দীর্ঘ ত্রিশ বছর দলবদ্ধভাবে প্রাণের বিদ্যাপীঠের আঙ্গিনায় প্রবেশ করেন। তবে, এবার বই-খাতার পরিবর্তে সাথে নিয়ে আসেন পরিবার-পরিজনকে। কেউ আসেন আদরের সন্তানকে কোলে নিয়ে, কেউ আসেন আদরের নাতি-নাতনিকে কোলে নিয়ে। দীর্ঘসময় পর দেখায় একে অপরে আলিঙ্গনে আবেগে আপ্লূত হয়ে যায় তারা। এই সময় তারা একে অপরের স্বামী-স্ত্রী, সন্তানসন্ততিদের পরিচয় করিয়ে দেন। এবং মুঠোফোন নম্বর ও সোস্যাল আইডি বিনিময় করে নতুন করে তারা প্রাণের সঞ্চার খুঁজে পায়।

সকাল ১০ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে বেলুন উড়িয়ে পুনর্মিলনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তাদের প্রিয় শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক অঞ্জন বড়ুয়া। এরপূর্বে তারা শতশত রঙিন বেলুন নিয়ে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক শুভংকর বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আক্তার, যুগ্ম সদস্য সচিব সুচিত্রা বড়ুয়া ও অর্থ উপ পরিষদের সচিব রাজেশ মুৎসুদ্দির সঞ্চালনায় আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অঞ্জন বড়ুয়া। প্রধান বক্তা ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাসরিন আক্তার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক মুছা মিয়া, চিন্ময় বড়ুয়া, স্মৃতিকণা বড়ুয়া, পাহাড়তলী ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অর্পিতা মুৎসুদ্দি প্রমুখ।

সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুনর্মিলনী উদযাপন পরিষদের সচিব মানস দাশগুপ্ত। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ৮৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রকৌশলী প্রসূন তালুকদার পাপন। সভায় শিক্ষকদের হাতে গুরুদক্ষিণা স্বরূপ সম্মাননা স্মারক ও শাল অর্পণ করা হয় এবং প্রতিটি শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মৃতিস্মারক। সভায় ‘কৈশোর’ নামক একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সভা শেষে মধ্যাহ্ন বিরতিতে সকলেই ভোজন উৎসবে অংশ নেন। বিরতি শেষে স্মতিতে হারিয়ে যায় স্কুল জীবনে।

এই স্মতিচারণে অংশ নেন প্রকৌশলী সৌরজিত বড়ুয়া, শামীম আকতার, রাশেদ মিয়া চৌধুরী, রাজেশ মুৎসুদ্দী, সুচিত্রা বড়ুয়া, আসমা সিদ্দিকা ও গোলাম কিবরীয়া ও সুদুর কানাডা থেকে নোবেল বড়ুয়া তালুকদার। স্মৃতিচারণ ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষার্থীদের কারো স্বামী, কারো স্ত্রী, কারো সন্তান কারো নাতি-নাতনিরা গান, নৃত্য, আবৃত্তিতে মাতিয়ে রাখেন অনুষ্ঠানস্থল। এতে শিক্ষা ও তাদের পরিবার-পরিজনদের অংশ গ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মিউজিক্যাল চেয়ার, গোলপোস্টসহ নানা ক্রীড়া প্রতিযোগীতা।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে র‌্যাফেল ড্র ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ত্রিশ বছরের পুরানো স্মৃতি ধরে রাখতে ত্রিশ পাউন্ড ওজনের বিশাল আকৃতি দুটি কেকে কাটেন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত বেতার শিল্পীদের পরিবেশনায় অনুষ্ঠিত সংগীতানুষ্ঠানের সুর-তালে নৃত্য-উল্লাসে কৈশোরের দুরান্তপনাকে হার মানান শিক্ষার্থীরা। এই দিনটিকে স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী ও পরিবার পরিজনদের সাথে স্ত্রীরচিত্রে আবদ্ধ হন। দিনশেষে ‘আবার দেখা হবে’ এই প্রত্যাশায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গন ত্যাগ করেন ৯৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।